যিনি একাধারে সরকারি চাকরিজীবী, গুণী কন্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার, অত্যন্ত মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন সফল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ফেনীর পুলিশ সুপার ‘এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার। ১৯৭৪ সালে জন্ম। বাবা- মরহুম নজরুল ইসলাম, মা- আনোয়ারা বেগম। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার সোনাহারা গ্রামে তাঁর পৈতৃক নিবাস। দৈনিক অজেয় বাংলা ‘ঈদ ম্যাগাজিনে’ তাঁর বিশেষ সাক্ষাতকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন সুরঞ্জিত নাগ

অজেয় বাংলা : পুলিশ প্রশাসনে কবে যোগ দিলেন?
জাহাঙ্গীর সরকার : ২০০৩ সালে ২২তম বিসিএস এর মাধ্যমে পুলিশে যোগদান করি। শুরুতে র্যাব-৭ এ দুই বছর আট মাস চাকুরি শেষে রংপুরে এক বছর সার্কেল অফিসে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন কঙ্গোতে এক বছর, অতপর ঢাকা মেট্রোপলিটনে সাড়ে তিন বছর বিভিন্ন শাখায় কাজ করি। ময়মনসিংহ জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইংয়ে কর্মরত থাকাবস্থায় পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে ৭-৮ মাস ঢাকায় উপকমিশনার হিসেবে কাজ করি। সর্বশেষ পুলিশ সুপার হিসেবে ফেনী জেলায় যোগদান।
অজেয় বাংলা : পুলিশের চাকুরির বাইরে অন্য কোন পছন্দ ছিল কীনা?
জাহাঙ্গীর সরকার : পুলিশ বিভাগে চাকুরি পেয়েছি আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর পূর্বে। বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম পছন্দ ছিল পুলিশ বিভাগ। বাংলাদেশে পুলিশের চাকুরিতে যেমনটি রয়েছে রাষ্ট্র ও নাগরিকের প্রতি সরাসরি দায়বদ্ধতা, তেমনি রয়েছে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার সুযোগ। দেশের নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুলিশ বিভাগের সদস্যরা সেবা দিয়ে আসছে। কাজেই ভালোলাগার নানা উপসর্গ রয়েছে। এক কথায় এ পেশা সকলের কাছে ঈর্ষণীয়। তাই ভালোতো লাগবেই…।
অজেয় বাংলা : আপনার বর্তমান কর্মস্থল ফেনীকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
জাহাঙ্গীর সরকার : সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিকগত অবস্থানে সারাদেশের মধ্যে ফেনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীত আলোচনায় ফেনীর পরিচিতি একটি বিশেষ অঙ্গে প্রকাশ করার মধ্যে কেউ কেউ ক্রেডিট অনুভব করতো। আমার দেখা বর্তমানে ‘ফেনী’ একটি নতুন মাত্রায় ধনাত্বক অঙ্গে আত্মপ্রকাশ করার ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগ করেছে। এমনটা চলমান থাকলে ফেনী জেলা সকল সমালোচনাকে উপেক্ষা করে ‘শান্তিপ্রিয় ও কল্যাণমুখী’ লাল সূর্যের প্রত্যাশিত নতুন দিগন্ত তৈরি করবে। যা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
অজেয় বাংলা : ফেনী জেলায় আপনার দেখা ভালো দিকগুলো কি?
জাহাঙ্গীর সরকার : মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ফেনী একটি গৌরবময় অধ্যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের যেসব অঞ্চল শুরু থেকে মুক্ত হয় তার মধ্যে ফেনী অন্যতম। ফেনীকে ঘিরে ছোট নদী ও মুহুরী প্রজেক্ট এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা দরকার, যেটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফেনীকে পরিচিতি তুলে ধরবে। শহরে থাকা ‘রাজাঝির দিঘী’ ও ‘বিজয়সিংহ দিঘী’ আলাদা সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে। যা ফেনীর ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে লালন করে। অন্যদিকে ফেনীর শিল্পোদ্যোক্তারা ফেনীর অঞ্চলের লোক ব্যতিত অন্যদের চাকুরি দিতে নিরুৎসাহিত করে, তা যদি অন্যরা অনুসরণ করতো তাহলে অন্য জেলায়ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর কর্ম সৃষ্টি হতো।

অজেয় বাংলা : বর্তমান সরকারের ঘোষিত মাদক নির্মূল অভিযানে ফেনী জেলা পুলিশ প্রশাসন কতটা ভূমিকা রাখছে?
জাহাঙ্গীর সরকার : পুলিশের নানামুখী কর্মের মধ্যে মাদক নির্মূলে কাজ করা অন্যতম অধ্যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী অন্যসব কাজের মধ্যে মাদক মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ফেনীতে মাদক উদ্ধারে পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। এক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন করার জন্য ‘র্যাব প্রধান’ ফেনী পুলিশের ভূয়সী প্রশংসাও করেন। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ, জনতা ও সুধীজন সবার সমন্বয়ে কাজ করতে চাই। যার যার অবস্থান থেকে সবাই যদি পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করে আশা করি সমাজ মাদকমুক্ত হবে।
অজেয় বাংলা : আপনি পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি একজন সঙ্গীত শিল্পীও- কোনটি আগে, আর দুটো কীভাবে সামলাচ্ছেন?
জাহাঙ্গীর সরকার : অবশ্যই গান আগে। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৫ সালে ১২ বছর বয়সে ওস্তাদ নরেশ চন্দ্র হাওলাদারের কাছে হাতেখড়ি নেয়া। এর আগেও আমি ছোটবেলা থেকে পারিবারিক উৎসাহের কারণে গান করতাম। সঙ্গীত গুরুমুখী বিদ্যা। সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আশির্বাদ না থাকলে সৃষ্টিমুখী বিদ্যার্জন কিংবা কল্যাণমুখী সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ মোটেই সম্ভব না। আমি মনে করি পুলিশের চাকুরির চেয়ে শতগুণ বেশি চ্যালেঞ্জিং একজন প্রকৃত শিল্পী হওয়া। লক্ষ্য যদি স্থির থাকে অর্জন সম্ভব।
আর দুটো একসাথে চলছে এতে কোনো অসুবিধে হয় না আমার। আমি মৌলিক গান করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক গান করতে বেশ ভালবাসি। আমার কথা, সুর ও কন্ঠে বেশ কয়েকটি গান বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার হয়েছে এবং ইউটিউব চ্যানেলেও রয়েছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা নির্যাতনকে নিয়ে করা আমার কথা ও সুরে ‘মানবতায় বাংলাদেশ’ গানটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
অজেয় বাংলা : এ পর্যন্ত আপনার কয়টি গানের অ্যালবাম বের হয়েছে?
জাহাঙ্গীর সরকার : পরীক্ষামূলকভাবে ‘প্রেমের বাউল’ নামে একটা অ্যালবাম বের করেছিলাম। এরপর ৫০টির বেশি গান করেছি, কিন্তু গানগুলো একত্র করে কোনো অ্যালবাম হিসেবে বের করার সময় আর হয়নি। ইতোমধ্যে দু’একটা মিক্সড অ্যালবাম, নাটক, টেলিফিল্ম ও টাইটেল সং-এ সুর ও গান করেছি।
অজেয় বাংলা : একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ফেনীর সংস্কৃতি অঙ্গন নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
জাহাঙ্গীর সরকার : বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার শহীদ জহির রায়হান, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার, নাট্যচার্য সেলিম আল দীনের পূণ্যভূমি ফেনী। অতীত ইতিহাসে দেখা যায় ফেনীর সংস্কৃতি অঙ্গনে অনেক সমৃদ্ধ ছিল। বর্তমানে তা আর সেভাবে চোখে পড়ে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে মৌলবাদীদের সংস্কৃতি অঙ্গনে অনুপ্রবেশের ঘটবে এবং প্রগতিশীলের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীলরা শেকড় গাড়বে। মূলত; শহরের মধ্যখানে অধুনালুপ্ত শহীদ জহির রায়হান হলটি পুন:স্থাপন করা খুব জরুরি। সাহিত্য ও সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা বাড়াতে সবার মনোযোগ কামনা করি।
অজেয় বাংলা : মানবিক মূল্যবোধ থেকে সমাজের প্রত্যেক নাগরিকের করণীয় কী?
জাহাঙ্গীর সরকার : ‘মানুষ মানুষের জন্য’। প্রত্যেকের মনন থেকে বিবেকের তাড়নায় তার পাশের দুর্বল মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা উচিত। একে অপরের প্রতি সহানভূতি নিয়ে যে সমাজ গড়ে উঠবে, সে সমাজ হবে নিরহংকার, হানাহানি মুক্ত ও অপরাধমুক্ত। এককথায় মানবিক মূল্যবোধের চাদরে ঢাকা সমাজ। প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ নিজের বিবেককে জাগ্রত করে এরকম একটি সমাজ গঠনে এগিয়ে আসা উচিত।
অজেয় বাংলা : আপনি ফেনীতে যোগদানের পূর্বে জনশ্রুত আছে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা ও বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বশালীর মাঝে কিছুক্ষেত্রে মতের অমিল প্রকাশ পেয়েছিল, আপনার ক্ষেত্রে এমন কোন বিষয় আছে কীনা?
জাহাঙ্গীর সরকার : এককথায় না। সবাই আমাকে কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে।
অজেয় বাংলা : আপনার ব্যক্তিগত জীবন-
জাহাঙ্গীর সরকার : আমি বিবাহিত। স্ত্রী মোনালিসা পারভীন সনি। একমাত্র কন্যা সারাহ্ মেহজাবিন মাথিন। ফেনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট সন্তান কিষাণ। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ছে। মহান সৃষ্টিকর্তার দয়া ও রহমতে বেশ ভালো আছি। আগামীতেও যেন ভালো থাকতে পারি, সকলের কাছে দোয়া চাই।
অজেয় বাংলা : যেহেতু ঈদ ম্যাগাজিন সাক্ষাতকার সেহেতু সর্বশেষ আপনার কাছে জানতে চাই কেমন কাটতো ছেলেবেলার ঈদ-
জাহাঙ্গীর সরকার : ঈদের আনন্দে মাত্রা ছিল ভিন্ন। মাঠের মাঝে দন্ডায়মান বাঁশে দড়ি বেঁধে ও রঙ্গিন কাগজ কেটে কেটে সাজানো হতো। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেড়ে ওঠা আমার। প্রতি ঈদে ভোরে বাবার সাথে গিয়ে নদীতে গোসল করতাম। নতুন জামা পরে মাথায় টুপি দিয়ে এক কিলোমিটার দূরে ঈদগাঁয় নামাজ পড়তে যেতাম। এখনকার মতো এতোটা আধুনিক বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল না। তবে বিকেল বেলায় বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের মাঝে ফুটবল খেলা উপভোগ করতাম চরম। আমি নিজেই আমার বাবার বিপক্ষে ফুটবল খেলা খেলেছি। এছাড়া ঈদের দিনের সালামী দিয়ে মার্বেল কিনে খেলতাম। মার্বেল খেলার আনন্দ ছিল। সপ্তাহখানেক এ করে বিনোদন পেতাম। ঝিরঝিরে বাতাস, নদীর পাড়, স্বচ্ছ-সুন্দর, নির্মল আকাশ-বাতাস প্রকৃতিতে যে আনন্দ পেয়েছি তা এখন আর নেই।
অজেয় বাংলা : শত ব্যস্ততার মাঝে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। এরই সাথে সাথে আপনার উজ্জ্বলময় ভবিষ্যত ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
জাহাঙ্গীর সরকার : প্রথমে দৈনিক অজেয় বাংলা সম্পাদকসহ অজেয় বাংলার পরিবারের সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এছাড়াও অজেয় বাংলা ‘ঈদ ম্যাগাজিনের’ মাধ্যমে সকল পাঠক, শুভাকাঙ্খীসহ সবাইকে জানাই ‘ঈদ মোবারক’।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”









