বিশেষ প্রতিনিধি :
করোনাভাইরাস আতঙ্কে দোকান-পাট, গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কায় গত কয়েকদিন ধরে ফেনী জেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে নিত্য
প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ভোক্তাদের ভোগান্তি দূর করে নির্ধারিত দামে পণ্যের বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে
পৃথক পৃথকভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। গত তিনদিনে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
এসময় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেশি রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
সূত্র জানায়, শনিবার, ২১ মার্চ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রাজিব দাস পুরকায়স্থ এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত বিশেষ অভিযান
চালিয়ে ফেনী শহরে বড় বাজারের আরিফ ট্রেডার্সে পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকায় এবং বেশি দামে চাউল বিক্রির অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা
আদায় করা হয়। একইদিন সোনাগাজাী উপজেলার ৫টি বাজারে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে মূল্য তালিকা না থাকায় এবং অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করায় ৭টি দোকানে ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এর আগে সোনাগাজীর জামাদার বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে পেঁয়াজ ও চাউলের অতিরিক্ত মূল্য রাখার অপরাধে অসাধু ব্যবসায়ীদের ১২
হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপরদিকে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে
ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে মূল্য তালিকা না থাকায় এবং অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির অপরাধে ৬ অসাধু ব্যবসায়ীর ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইভাবে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার অজিত দেবের
নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে মূল্য তালিকা না থাকায় এবং অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির অপরাধে
অসাধু ব্যবসায়ীর ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে অসাধু ব্যবসায়ীরা করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে ক্রেতাদের ঠকিয়ে প্রতারণামূলক চড়া দামে চাউল বিক্রির অভিযোগে গত বুধবার ফেনী বড় বাজারে বিভিন্ন আড়তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালতের
মাধ্যমে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে চার ব্যবসায়ীর ২৪ হাজার টাকা জরিমানা প্রদানের আদেশ দেন ভ্রাম্যমান আদালত। ভ্রাম্যমান আদালতে নেতৃত্ব দেন- জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান ও রজত বিশ^াস।
অভিযানের সময় দোকানে মূল্য তালিকা না পাওয়ায় নির্বাহী মাজিষ্টেট ব্যবসায়ীদের সর্তক করে দেন। আভিযান শেষে বিভিন্ন বাজারে করোনাভাইরাস সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ করেন ও বক্তব্য রাখেন।
এসময় আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে জেলার পাঁচগাছিয়া বাজার, বিরলী বাজার, রাজাপুর বাজার, কোরাইশমুন্সি বাজার, দরবেশের হাট বাজার, অলাতলি, সিন্দুরপুর,
সিলোনিয়া, দুধমুখা, আমিন বাজার, শর্শদী বাজার, লেমুয়া বাজার, লস্করহাটসহ জেলার বিভিন্ন কাঁচামালের আড়ত ঘুরে দেখা যায় ব্যবসায়ীরা
চাউল, ডাউল, পেঁয়াজ, রসূনসহ নিত্য পণ্যের খোড়া অজুহাতে সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে।
আতঙ্ক গ্রস্থ নিরীহ মানুষ তীব্র সংকটের আশঙ্কায় জিনিসপত্র কিনছে হুমড়ি খেয়ে, আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে
প্রতিদিন লাগামহীন ভাবে হু হু করে বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম।
গত দুইদিনে চাউলের দাম হু হু করে বাড়ছে । ৫০ কেজির বস্তা ১৯শ থেকে এক লাফে ৫শ টাকা বেড়ে ২৩শ থেকে ২৪শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অনুরুপ মোটা
চাউল ১১/১২শ থেকে ১৯ শত টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি থেকে ৮০ টাকা এবং রসূন ৬০ টাকা থেকে ১১০ টাকা
কেজিতে বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে যে আলু ২দিন আগে ১২ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে সে আলু শনিবার বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ায় সাধারণ জনগনের নাভিশ্বাস শুরু হয়ে গেছে।
একইভাবে মাছ, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম উর্ধ্বমূখী।
বিক্রেতাদের অভিযোগ বিভিন্ন দোকান থেকে কোম্পানীতে অর্ডার দিয়েও মিলছে না মালামাল।
করোনাভাইরাস নির্দেশনা উপেক্ষা করে গন জমায়েতর মাধ্যমে বিয়ের আয়োজন করায় গত শুক্রবার দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকায় দুইটি বিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান।
সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। স্বামী অসুস্থ। মোটা চাল খাই। যে চালের বস্তা ছিল ১৫ থেকে ১৬শ টাকা। সেই চালের বস্তা এখন ১৯শ টাকা।
এত টাকা দিয়ে আমরা কীভাবে চাল কিনব? সরকার যদি এ ব্যাপারে নজর না দেয় তাহলে আমরা কীভাবে চলব? কীভাবে সংসার চালাব? এটা কী মগের মুল্লুক নাকি?
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ফেনী শাখা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাঙ্গাহীর আলম নান্টু বলেন, করোনাভাইরাসে
আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে বহু মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করছেন। এর সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
করোনাভাইরাসের মতো কঠিন সময়ে বাজার অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম বিপদে পড়বেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যদি না থাকে, সেটা হবে আরও খারাপ।
জেলা প্রশাসনের বাজার পরিদর্শনকে স্বাগত এবং সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলাবাসী। বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে অসাধু, মুনাফা খোর ব্যবাসায়ীদের
প্রতি যেন এইভাবে প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যহত থাকে সেই দাবি সচেতন ফেনীবাসীর।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”