শওকত মাহমুদ :
ফেনীর সোনাগাজী এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গড়ে উঠছে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাব্য ৩০ হাজার একর ভূমির মধ্যে ২০ হাজার একরেরও বেশি ভূমি পড়েছে ফেনীর সোনাগাজী অংশে। এদিকে মিরসরাই হয়ে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলমুখী অপরিকল্পিত ও একপেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা ফেনী অঞ্চলকে রাখবে অন্ধকারে! এমনই অভিমত যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের। এখন জোর দাবি উঠেছে, এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়াতে এবং ফেনী থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলমুখী সহজ যোগাযোগ স্থাপনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল থেকে ফেনী-সোনাগাজী সড়কটি ফোর-লেনে উন্নীত করার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বে মুহুরী রেগুলেটরের ভাটিতে বাঁকা নদী সোজাকরণের ফলে চরচান্দিয়া ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে নতুন জেগে ওঠা বাহির চর, পূর্ববরইতলী, চর এলেন, চর নাসরিন, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের ঠাখ খোয়াজের লামছি, চর রামনারায়ন, চর খোয়াজের লামচি, নতুন চর এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার উত্তর-পূর্বে ইছাখালী ও ওসমানপুর ইউনিয়নের চর মোশাররফ, চর ওসমানসহ আশেপাশের প্রায় ৩০ হাজার একর ভূমি নিয়ে গড়ে উঠছে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘ফেনী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’। এদিকে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভূমি ফেনীর সোনাগাজী অংশে পড়লেও অর্থনৈতিক অঞ্চলমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হচ্ছে ফেনীর মূল ভূখন্ডকে পাশ কাটিয়ে। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলমুখী দুটি সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। একটি সড়ক নির্মিত হচ্ছে মিরসরাই বাজারের কাছ থেকে। আরেকটি সড়ক মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থেকে ইছাখালী, ইছাখালী থেকে সিডিএসপি বেড়িবাঁধ হয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত। আবার এ সড়কটি সোনাগাজীর বাদামতলী, সোনাগাজী বাজার, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর হয়ে সোনাপুর বাজারে গিয়ে মিলিত হবে।
অর্খনৈতিক অঞ্চলমুখী দুটি সড়কই ফেনীর মূল ভূখন্ডকে পাশ কাটিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকার মধ্য দিয়ে নির্মিত হচ্ছে। যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একপেশে এ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একদিকে-ফেনীর সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চলের দূরত্ব বাড়বে। ফেনী থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল যেতে প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। অন্যদিকে- অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে ফেনীতে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেই সম্ভাবনা দারুণভাবে ব্যাহত হবে। তাঁরা মনে করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপোল থেকে ফেনী-সোনাগাজী সড়কটি ফোর-লেনে উন্নীত করে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত নেওয়া গেলে ফেনী থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এতে করে, ফেনীর সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চলের দূরত্ব যেমন কমবে, তেমনি অর্থনৈতিক অঞ্চলকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারও ঘটবে। এছাড়া অদূর ভবিষ্যতে সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হলে বন্দরের সাথে ওই সড়ক দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হবে।
ফেনী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপোল থেকে ফেনী-সোনাগাজী সড়ক দিয়ে খুব সহজেই ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব। এ সড়কের সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংযোগ না থাকার অর্থ হলো অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ফেনী জেলা থেকেই বিচ্ছিন্ন করে রাখা। তিনি বলেন, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে এখানে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের আগমণ ঘটবে। তাদের থাকা-খাওয়া, সহজ যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য ফেনী শহরই হবে উত্তম জায়গা। তিনি বিষয়টি সুবিবেচনায় নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকার ও অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।
ফেনী জেলা পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম নবী বলেন, ফেনী অব্জলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের লোকজনদের মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ হয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতায়াত করতে হলে ৫০-৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপোল থেকে ফেনী-সোনাগাজী সড়ক দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হলে এ দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এতে করে, সময় ও অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হবে।
সোনাগাজী প্রেস ক্লাবের সভাপতি শেখ আবদুল হান্নান বলেন, দেশের বৃহৎ এ অর্থনৈতিক অব্জলটি সোনাগাজী ও মিরসরাই এলাকা নিয়ে গড়ে উঠলেও একপেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এর পুরো সুবিধা ভোগ করবে মিরসরাই এলাকার মানুষ। সোনাগাজী ও ফেনীর মানুষ এ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং দিন বদলের যে স্বপ্ন দেখছেন, সেটি অধরাই থেকে যাবে। একমাত্র ফেনী-সোনাগাজী সড়ক দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপনই পারে ফেনীবাসীর স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ছাড়াও অদূর ভবিষ্যতে সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলে যদি বন্দর স্থাপিত হয়, তখন ওই সড়কটির গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান অর্থনৈতিক অঞ্চলমুখী অপরিকল্পিত ও একপেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ফেনীর উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার স্বার্থেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপোল থেকে ফেনী-সোনাগাজী সড়ক হয়ে যোগাযোগ স্থাপন করা দরকার। একপেশে যোগযোগ ব্যবস্থার কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে ফেনীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং যে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা দারুণভাবে ব্যাহত হবে বলে তিনি মনে করেন। বাস্তবিক এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বিষয়টি তিনি (জেলা প্রশাসক) এরই মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ফেনী-সোনাগাজী সড়কটি ফোর-লেনে উন্নীত করার একটি প্রস্তাবনাও তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”