স্টাফ রিপোর্টার :
তীর সংরক্ষণ না করা করায় ফেনী নদীর ভাঙ্গনে ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের মধ্যম লাঙ্গলমোড়া, পূর্ব লাঙ্গলমোড়া ও পশ্চিম লাঙ্গলমোড়াসহ কয়েক গ্রামের ১০ হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর বর্ষাকালে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ওই ইউনিয়নের বেশিরভাগ অংশ পানির নিয়ে তলিয়ে যায়। ফলে বন্যা এবং পাহাড়ি ঢলে মারাত্মক ভাঙ্গনের কবলে পড়ে গৃহহীন হচ্ছে এলাকাবাসী। এদিকে ফেনী নদীর তীর সংরক্ষণের দাবি এবং স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ উন্নয়নের উদ্যোগে মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্থরা। এ সময় এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ নদীর পাড়ে এসে জড়ো হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, চাকুরিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর সবার অভিন্ন দাবী ভাঙ্গনের কবল থেকে তাদের বাপ-ভিটার মাটি রক্ষা করা হোক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সাল থেকে লাঙ্গলমোড়া গ্রামের মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে ভাঙ্গন প্রতিরোধে নদী লুপ কাটিং করা হলেও দুই তীরের বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় পুনরায় ভাঙ্গনের কবলে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। গত ২-৩ বছরে বন্যায় পাঁচশত মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যাবধি ১০ হাজারেরও অধিক লোক ঘর-বাড়ি ও জায়গা জমি সর্বস্ব হারিয়ে অন্যের জায়গায় বসবাস করছে। বাড়ীঘর জমিজমা নদী গর্ভে সর্বস্ব বিলীন হওয়ায় মানুষজন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
নদী ভাঙ্গনের নির্মম শিকার এলাকার মাষ্টার মো. সিরাজুল ইসলাম, শাখাওয়াত হোসেন, সাবেক মেম্বার নু রনবী, মহিউদ্দিন, বেলায়েত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কবির আহম্মদ, গৃহহীন ছকিনা বেগম জানান, সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু নাঙ্গলমোড়া গ্রামবাসীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না।
জানা যায়, ফেনী নদীর দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গনের শিকার লাঙ্গলমোড়া এলাকাবাসী। নদীর ভাঙ্গনে বদলে গেছে গ্রামের মানচিত্র। বর্তমানে অধিকাংশ ফসলি জমি এবং বসত বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের অংশে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৫’শ একর জমি ভোগ দখল করছে ওই উপজেলার মানুষ।
গত বছর অক্টোবর মাসের দিকে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে নদী ভাঙ্গনের শিকার ছয়শত লোকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়- ফেনী নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে অচিরেই হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে। এছাড়াও ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার এমপি সম্প্রতি নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বেড়িবাঁধ নির্মাণে এলাকাবাসীকে সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্থদের আয়োজনে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা পরিষদের সদস্য আখতার হোসাইন স্বপন, ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এফ. এম আজিজুল হক মানিক, জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মো. মোস্তফাসহ হাজার হাজার নারী-পুরুষ।
এলাকাবাসীরা জানান, তাদের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য’র সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় মাপঝোপের কাজ সম্পন্ন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কহিনুর আলম সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার একটি নকশা এবং চুড়ান্ত হিসাব নিকাশ তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রের অনুমতি পেলে নদীর বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নদী থেকে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান জানান, এলাকার মানুষের কল্যাণে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেবেন তিনি।
ভাঙ্গনের কবলে ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের বসত বাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেছেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”