আলমগীর মাসুদ :
সত্য সুন্দর কিছু বলতে চাইছি বলে এই সামান্য লেখার কারণ। এই লেখায় কারো উন্নয়ন বা দুর্নীতির কথা আসেনি। তবে চরিত্রটা কারো কারো একটু জোড়ালো বা হালকা হতে পারে বৈকি। আয়নায় একটু ক্লিয়ার দেখলে বেশ বুঝা যাবে যে, আমি কোন চরিত্রের কথা বলছি। সম্প্রতি চলে যাওয়া ফেনী জেলার আওয়ামী রাজনীতির একটি বড়ো নাম আজিজ আহম্মদ চৌধুরী। হ্যাঁ, এই নামের মানুষটিকে নতুন করে বলে বা লিখে পরিচয় করে দেয়ার কিচ্ছু নেই। কারণ গোটা ফেনী জেলার মানুষের মাঝে আজিজ আহম্মদ চৌধুরী নামের মানুষটি একদম মুখস্থ। কেনো মুখস্থ, তা বলছি।
আওয়ামী লীগ দলটাকে ভালোবেসেছিলাম বুঝ হওয়ার পর থেকেই। আর এই ভালোবাসা আমার ভেতর তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র রেডিও ও বিটিভিতে মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার কারণে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দ্বারা আমি ছেলেটা বেড়ে উঠার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ শব্দটাকে আবিষ্কার করতে শিখেছি। অবশ্য এর জন্য নিজে নিজেই কিছু কিছু সময় ভুলভাল কাজ করেছি। যার প্রমাণ ফিরোজ, শাহজাহান নামের সে শৈশবে একসাথে থাকা আমার দুই বন্ধু এখনো আছে। একদিন এক সন্ধ্যায় (তখন বিকাল পর সন্ধ্যায় মিছিল বেশি হতো) এলাকার বড়দের সাথে মিছিলে যোগ দিই। স্লোগানে স্লোগানে একসময় উত্তেজিত হয়ে যাই। তারপর কখন যে নিজের গলা ভেঙে গেছে টের পাইনি। সাথে পায়ের জুতা জোড়াও ছিড়ে গেছে। এভাবে প্রায় সময় মিছিলে যেতাম শুধু নিজের ভালোবাসা থেকে। এসব কারণে ঘর থেকে আমাকে শাসন বকাঝকা তিরস্কার ধমকানো প্রায় লেগেই থাকতো! অবশ্য দু-একবার বড়ভাইয়ের হাতে মাইরও খেয়েছি। তার বহু পরে মায়ের ছাপে একদিন মায়ের কাছে ওয়াদা করলাম, আমি কখনো সক্রিয় রাজনীতি করবো না। করিনি। তবে সাপোর্টটা মনের ভেতর জিইয়ে রেখেছি আজও।
খ.
সে ছোটবেলা থেকে এখন প্রর্যন্ত কোনোপ্রকার স্বার্থ ছাড়া দূর থেকে যাঁদের ভালো লাগতো বলে যাঁদের এখনো লালন করি, যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মাওলানা ভাসানী, শেখ হাসিনা, আব্দুল হামিদ, মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, আজিজ আহম্মদ চৌধুরী, সোহেল তাজ, মাহবুবুল হক শাকিল ভাই। এর বাহিরে অন্য দল বা অন্য মতের রাজনীতিবিদও ক’জন আমার পছন্দের আছে, যাঁরা অলওয়েজ ভদ্রতার পরিচয় রাখেন। এই মানুষগুলোর প্রায় প্রতিটি নামের সাথে কোনো না কোনোভাবে ‘অকাল’ তকমাটা লেগেই আছে। যেমন সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় আজিজ আহম্মদ চৌধুরী আমার ভালোলাগার একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। অনেকে প্রশ্ন রাখতে পারেন, ‘আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর তো বয়স হয়েছে, তিনি মারা যেতেই পারেন’ হ্যাঁ স্বীকার করছি তাঁর ব্যক্তি মানুষটার বয়স হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে কি এই মানুষটির বয়স হয়েছে? মোটেও হয়নি। সৎ শিক্ষিত রাজনীতিবিদরা বেঁচে থাকা মানে রাষ্ট্র ও সমাজের চেহারা সবুজ-সতেজ হওয়া। আর এসব ব্যক্তিপুরুষ চলে যাওয়া মানে আমাদের জন্য অকাল হয়ে যাওয়া। এভাবে যদি বলি, এই মহান নেতারা চলে যাওয়া মানে রাষ্ট্র সমাজ আর সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। অতএব বলতে পারি এখানে, শ্রদ্ধেয় আজিজ আহম্মদ চৌধুরী কেবল তারুণ্যের মাঝেই নয়, তিনি সব বয়সের সকল মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এবং মৃত্যুর পরেও শ্রদ্ধার জায়গায়তেই তিনি বসে আছেন সবার মননে।
গ.
বাংলাদেশ কিংবা ফেনী বলতে কোনো আলাদা শব্দ নেই। বলা যায় টোটালি গোটা দেশের আওয়ামী রাজনীতিতে ভালো-খারাপের একটা অকাল চলছে। কেনো চলছে তা বোদ্ধামহল ভালো জানেন। আমরা সাধারণরা শুধু জানতে পারি, যখন সমাজ শহর ও রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ সৎ মেধাবী পুরুষ মারা যান, তখন আমরা আহত হই। আমরা ভেঙে পড়ি। কারণ আমরা আমাদের শিক্ষার জায়গায়টা তখন হারিয়ে ফেলি। যেমন শিক্ষক যদি মারা যান, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিও আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যায়। বলছিলাম জাতির জনকের আদর্শের ধারক আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ আমাদের শ্রদ্ধাভাজন সদ্য প্রয়াত আজিজ আহম্মদ চৌধুরী’র কথা। গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সমবার সকাল সকাল সংবাদটি শোনার পর বিস্ময় হলাম। বিস্ময় হলাম এই জন্যে, এমন সংবাদ শোনার অপেক্ষায় মোটেও প্রস্তুত থাকি না আমরা। হ্যাঁ প্রস্তুত আমরা কখনোই থাকি না। তবু সকালে ঘুম ভাঙার পরপর শুনতে হয়, এসব অকাল শব্দের গান! শুনেছিও দু’কানে একজন আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর চলে যাওয়া সংবাদ! যেমন তর্ক থাকাটা ভালো। তর্ক আর বিতর্কের মধ্য দিয়েই কিন্তু সৃষ্টিশীলরা অনেকবেশি সমৃদ্ধিলাভ করেন। আজিজ আহম্মদ চৌধুরী বাংলাদেশ তথা ফেনী আওয়ামী রাজনীতিতে একজন স্বতন্ত্র পুরুষ এ-কথা বলতে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর যাপিত জীবনের সুখদুখ আর হাসি কান্নার মাঝেই কিন্তু তিনি মানুষের ভালোবাসা জয় করতে পেরেছেন। পেরেছেন বহুজনে বহুমাত্রায় ছিটিয়ে যাওয়া একজন শক্তিশালী পুরুষ হতে। পৃথিবীর এহেন কোনো মানুষ নেই যে, যাদের নিয়ে দু-চারটি বিতর্ক নেই। দু-চারটি প্রশংসা নেই। হা, বিতর্ক-সুনাম দুটোই আছে। বির্তক আছে এবং প্রত্যেকটি মানুষের জন্য বিতর্ক থাকা জরুরি বলেও মনে করি। কারণ এই বিতর্কের মধ্য দিয়েই কিন্তু একজন মানুষ সত্যিকারের শুদ্ধ মানুষে রূপান্তরিত হন। তেমনি গত হওয়ার আগে আমাদের শ্রদ্ধেয় আজিজ আহম্মদ চৌধুরীরও নিজেকে শুদ্ধ মানুষ পরিচয়ে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। আর পেরেছেন বলেই জানাজায় তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল দেখেছি। দেখেছি শত শত মানুষের অশ্রুসংবরণ। আরো দেখেছি ব্যানার ফেস্টুনসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় টানা শোকশ্রদ্ধা।
ঘ.
সত্যি আমি কল্পনা করি যে, স্বপ্ন নয় একজন আজিজ আহম্মদ চৌধুরী একা পায়ে হেঁটে হেঁটে স্বার্থহীন বিরোধিতার সকল শিকল দূরে রেখে একক স্বতন্ত্রতা বহন করতে পেরেছেন। পেরেছেন নিজ বিশ্বাসের খাতাটা শুদ্ধ রাখতে। তাই মানুষও বিশ্বাস করেছে তাঁকে। বিশ্বাস করেছে তাঁর রেখে যাওয়া পরিবারকেও। হ্যাঁ পরিবারকে বিশ্বাস করেছে বলেই রাজনৈতিক পরিচয়ে অধিক পরিচিতি লাভ করা আদর্শ পিতার আদর্শ সন্তান হিসেবে আমরা বলতে পারি, আজকের রাজীব চৌধুরীর কথা। মানুষের মাঝে ‘ভদ্র’ উপাধী লাভ করতে কে পারে? সক্ষম কয়জন হন? ভালো ও সমৃদ্ধ পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষগুলোই মূলত ভালো ও পজিটিভ চরিত্রের মানুষ হিসেবে তৈরি হন। এমন একজনের নাম চৌধুরী আহমদ রিয়াদ আজিজ রাজীব। সে ভালো ও জ্ঞানীদের পথে থাকবেন বলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে। কারণ এমন মানুষরাই যেকোনো পদে থাকার সকল যোগ্যতা জিইয়ে রাখেন। আর সৎ ও শিক্ষিত মানুষগুলো পদে থাকা মানে রাষ্ট্র ও সমাজের সুন্দর রঙটাও আরো বেশি ছড়িয়ে যাওয়া। আর এই জন্যই কালে কালে সাধারণ মানুষদের সত্য স্যালুট এঁরাই বেশি পায়। আবার এটাও সত্য, হীনমন্যতায় ভরা অন্য জাতীদের যেমন আলাদা এক রূহ খবিশ জাতি বলা হয়, একইভাবে একজন ভালো নেতার জন্য মানুষ মোনাজাত ধরতেও দেরি করে না। আবার দুশ্চরিত্র অহংবোধ ভন্ড দুর্নীতিবাজ যারা, তাদেরকে সাধারণ মানুষরা কিন্তু ঠিকই থুতু দেয়।
বর্তমান রাজনীতিতে আদর্শ রাজনৈতিক নেতা সন্দেহহীন হাতে গোনা যায়। আর হাতে গোনা যায় বলেই আজিজ আহম্মদ চৌধুরীরা সম্মান নিয়ে একা অকালে চলে যান। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটা স্থানে প্রকৃত রাজনীতিবিদ যেনো আমরা পাই। কামনা একটাই, সৎ রাজনৈতিক নেতার হাত দিয়ে যেনো এই দেশ এগিয়ে যায়। তবেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা সাথে ৩০ লক্ষ শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। নতুন করে ‘অকাল’ শব্দটা ভালোর কাতার থেকে মুছে যাক। মানুষের জয় হোক। পৃথিবীটা মানুষের হাতে বারবার সুন্দর হোক। সমুদ্রকে পিছনে ফেলে আসলেও আমরা সমুদ্রজলকে ঠিক কাছে কাছেই রাখতে চাই। আমরা ভুলবো না রাজনীতিরঘরে শক্তিমত্তার সাক্ষর রাখা একজন আজিজ আহম্মদ চৌধুরীকে। আমরা ভুলবো না রাজনীতির বারান্দায় বৃদ্ধ হওয়া একজন আজিজ আহম্মদ চৌধুরীকে। কারণ মহান ব্যক্তিদের কখনো ভুলা যায় না। আজিজ আহম্মদ চৌধুরী আমাদের মস্তিষ্কে বেঁচে থাকুক হাজার বছর।
#লেখক : সম্পাদক, ভাটিয়াল, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”