রাজেশ মজুমদার :
শারীরিক শিক্ষার আবশ্যিক কর্মসূচির মধ্যে প্রাত্যহিক বা দৈনিক সমাবেশ একটি। বিদ্যালয়ে সমাবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাত্যহিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ের কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলীয় সমঝোতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিসীম ও অনিবার্য।
প্রাত্যহিক বা দৈনিক সমাবেশ পরিচালনার কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো সুনির্দিষ্ট। দৈনিক সমাবেশে একজন শিক্ষার্থী যে কোন স্থানে দাঁড়িয়েই গেলেই চলবে না, দৈনিক সমাবেশের লাইন ও ফাইল শ্রেনী ভিত্তিক হতে হবে এবং লাইন ও ফাইল উচ্চতা অনুযায়ী সামনে ছোট থেকে পেছনে বড় সাজিয়ে দাঁড়াতে হবে। শুধু শিক্ষার্থী না শিক্ষকদের দাঁড়ানোর নিয়মও সুনির্দিষ্ট। যেমন পতাকার বাম পাশে প্রধান শিক্ষক,ডান পাশে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক ,তার ডান পাশে বিদ্যালয়ের ক্যাপ্টেন সমাবেশের দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন আর অন্য শিক্ষকেরা ও যে কোন এক পাশে লাইন বা অর্ধবৃত্ত করে পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন। মূলত যেকোন প্রতিষ্ঠানের সমাবেশের সমাবেশ পরিচালনার প্রথম এবং প্রধান চ্যালেঞ্জ সমাবেশের লাইন ও ফাইল করা এবং লাইন যেহেতু উচ্চতানুযায়ী হয় সেহেতু এই কাজটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপারও বটে।
সমাবেশের মোট ০৮ (আট) টি ধাপ থাকে। সমাবেশের প্রথম ধাপটি হল – প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলন।
দ্বিতীয় ধাপে জাতীয় পতাকা’র প্রতি সম্মান প্রদর্শন। প্রতিষ্ঠান প্রধান জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এক কদম বা এক পদক্ষেপ পিছনে এসে পতাকাকে অভিবাদন করবেন। সাথে সাথে সমাবেশে উপস্থিত অন্য সকলে সোজা অবস্থায় হাত তুলে অভিবাদন করবেন।
তৃতীয় ধাপে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। পালাক্রমে প্রত্যেক দিন শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী এসে কোরআন পাঠ করবে এবং হিন্দু শিক্ষার্থী থাকলে গীতা পাঠও করবে অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী থাকলে সেই সকল ধর্মগ্রন্থ থেকেও পাঠ করতে হয়।
সমাবেশের চতুর্থ ধাপে শপথ পাঠ করানো হয়। বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী শপথ বাক্য পাঠ করবে এবং সাথে সকল শিক্ষার্থী পাঠ করবে। বিদ্যালয়ের একজনের আদেশের দ্বারা সমাবেশ পরিচালনা হবে। এইভাবে এক এক দিন একেক জন শিক্ষার্থী সমাবেশ পরিচলনা করবে।
পঞ্চম ধাপে জাতীয় সঙ্গীত। শিক্ষার্থীরা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সবাই এক সাথে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
সমাবেশের ষষ্ঠ ধাপে প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভাষণ। মূলত বিদ্যালয়ের বিশেষ ঘোষণা, জরুরী বক্তব্য এই ধাপে দেয়া হয়। ০৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিপত্র মোতাবেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের Assembly এর সময় অথবা প্রতিটি ক্লাশ শুরুর পূর্বে প্রথম ১০(দশ) মিনিট নৈতিকতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করতে হয়। এই কাজটি সাধারণত তখনই করা হয়।
সমাবেশের সপ্তম ধাপে শরীর চর্চা। ৫ মিনিটের জন্য শরীর চর্চা অনুশীলন (পি,টি ) করাতে হয় তবে এমন কোন শরীর চর্চা করানো যাবে না যার ফলে শিক্ষার্থীদের শরীরে মাটি লাগার সম্ভাবনা থাকে।
সমাবেশের অষ্টম বা সর্বশেষ ধাপে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। শারীরিক শিক্ষকের নির্দেশে শ্রেণি নেতার তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করবে।
সম্প্রতিক নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি শিফট চালুর পূর্বে অর্থাৎ প্রথম শিফট চালু হবার পূর্বে ৯:০০- ৯:১৫ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় শিফট চালু হবার পূর্বে ১২:০০- ১২:১৫ পর্যন্ত দুইবার সমাবেশ করতে হয়।সমাবেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন ধাপ বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নাই। সমাবেশের প্রতিটি ধাপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় লাইন ও ফাইল করার জন্য ৩ মিনিট, পতাকা উত্তলোন এবং অভিবাদনের জন্য ২ মিনিট, ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের জন্য সর্বনিম্ন ২মিনিট এবং যেই সকল বিদ্যালয়ে একাধিক ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী আছে সেই সকল বিদ্যালয়ে প্রতিটি ধর্মের জন্য আরো ২ মিনিট করে লাগবে। শপথ বাক্য পাঠ করানোর জন্য কমপক্ষে ৩ মিনিট, জাতীয় সঙ্গীতের জন্য ৪ মিনিট, প্রধান শিক্ষকের ভাষণ এবং নৈতিক বাক্যের জন্য ১০ মিনিট, ৫ মিনিট শরীর চর্চা এবং সমাবেশ সমাপ্ত করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে প্রবেশের জন্য কমপক্ষে ৩ মিনিট সময়ের প্রয়োজন। সেই মোতাবেক প্রায় ৩২ মিনিট সময়ের প্রয়োজন হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং নামানোর কিছু নিয়ম আছে। কেউ চাইলেই যখন তখন পতাকা উঠাতে বা নামাতে পারবেন না। তাই দ্বিতীয় শিফটের সমাবেশের সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য ২ মিনিট সময় সাশ্রয় হয় বলে ৩০ মিনিট সময়েই সমাবেশ শেষ করা যায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ বিদ্যালয় দুই শিফটে পরিচালিত যেহেতু প্রথম শিফটের শ্রেণি কার্যক্রম ১২:০০ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় শিফটের সমাবেশ ১২:০০ থেকেই শুরু এবং স্কুল ব্যাগ কাধে নিয়ে সমাবেশ দুরূহ কাজ তাই দ্বিতীয় শিফটের শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুল ব্যাগ কোথাও রেখে সমাবেশে অংশ নেয়। এবং সমাবেশ শেষ করে নিজ নিজ ব্যাগ সংগ্রহ করে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে বলে অতিরিক্ত কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী না থাকায় শিক্ষকদেরই বিদ্যালয়ের দরজা জানালা খুলতে হয়। একজন শিক্ষকের বিদ্যালয়ের আগমনের সময় ৯:০০ তাই শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেই সমাবেশের প্রস্তুতি নেন বলে প্রথম শিফটের শিক্ষার্থীদের কে স্কুল ব্যাগ কোথায় রেখে সমাবেশে অংশ নিতে হয়। অন্যদিকে সমাবেশের পরপরই শিক্ষকেরা পাঠদানের জন্য শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন তাই শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাওয়া যায় না।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোভাব ও সমঝোতা বৃদ্ধি, জাতীয় চেতনা ,জাতীয়তা বোধ এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করা, সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানো, সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি, দেহ ও মনে সুস্থ জীবন – যাপনের জন্য সমাবেশে প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম এগিয়ে আনায় এই সমাবেশ এবং শ্রেণি কার্যক্রম নিয়ে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত সময়সূচীর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পুনঃবিবেচনা করা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”