সদর প্রতিনিধি:
ইসমাইল হোসেন (৩০), ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী গ্রামের আব্বাস বেপারী বাড়ির শরিয়ত উল্যাহর ছেলে। প্রায় ১১ বছর পরিবারের সচ্ছলতা আনতে সাউথ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। ওখানে দীর্ঘ কষ্টের পর একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আস্তে আস্তে সচলতা আসে পরিবারে। বাড়িতে আধুনিক ডিজাইনের দোতলা বিল্ডিং এর কাজও শেষ পর্যায়ে। আগামী দুই-তিন মাস পরে দেশে আসলে তাকে বিয়ে করানোর প্রস্তুতি চলছে। দুইদিন আগে সর্বশেষ পরিবারের সাথে কথা হয় ইসমাইলের। সে তখন জানায়, বড় আয়োজনে বিয়ের জন্য সকল প্রস্তুতি নিতে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় কেপটাউনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তার ও পরিবারের স্বপ্ন।
নিহত ইসমাইল হোসেনের পিতা শরীয়ত উল্লাহ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলের সাথে কয়েকদিন আগে মোবাইল ফোনে আমার সাথে কথা হয়। তখন সে জানায়, আগামী দুই-তিন মাস পরে দেশে ফিরবে। তখন বড় আয়োজন ধুমধামে তার বিয়ে হবে। ইতিমধ্যে বিয়ের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। কয়েক জায়গায় পাত্রী ও দেখা হয়েছে। তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এর আগেই সে লাশ হয়ে গেল।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ আমার ছেলেকে হারিয়েছি। তবে তার লাশটি যেন দ্রুত দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেন।
নিহত ইসমাইলের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, আমার ভাই কারো সাথে কখনো কোন ঝগড়া বা বিবাদে লিপ্ত হয়নি। সে সহজ সরল প্রকৃতির ছিলো। তার মৃত্যুতে আমরা বাকরুদ্ধ, পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক সপ্তাহ আগে দেশে ফেরা নিহতের ছোট ভাই নিজাম উদ্দিন বলেন, বড় ভাই ইসমাইল ১১ বছর আগে সাউথ আফ্রিকায় যান। ওখানে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। আমাকেও সাউথ আফ্রিকায় নিয়ে যান। কয়েক বছর আগে কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা তার দোকানে হামলা করে তাকে গুলিও করে কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার ভাই বেঁচে যায়। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ভাই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি এক সপ্তাহ আগে ভাইকে সর্বশেষ বিদায় দিয়ে এসেছি। এই কষ্ট ভুলবো কিভাবে?
নিহতের স্বজন মাঈন উদ্দিন সুমন জানান, ইসমাইল দক্ষিণ আফ্রিকায় তার আরো একভাইসহ একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে ইসমাইল দ্বিতীয়। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন জানান, খবর শুনে বিরলীতে ইসমাইলের বাড়িতে ফেনী জেলা প্রশাসক ও ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ আমরা ছুটে যাই এবং পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দেবার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, রেমিটেন্সযোদ্ধা ইসমাইলের মরদেহ দেশে আনতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের বাড়িই ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায়। সংশ্লিস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিহতদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের খোঁজ খবর নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিহতদের লাশ দেশে আনতে আইনগত সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে গত শুক্রবার লরিচাপায় একই পরিবারের বাবা-ছেলেসহ ফেনীর পাঁচজন নিহত ও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”
- » ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন