মো. শফি উল্লাহ:
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলেরপানি বন্যার পানি নামার সাথে সাথে জেগে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। গত সোমবার ভোরে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিনটি স্থানে ভেঙে ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম উপজেলার বির্স্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট,ফসলি জমিতে রোপা আমনের চারা,বীজতলা,সবজিক্ষেত,মৎস্যঘের। এদিকে গত ৫ বছরে১০কোটি টাকা ব্যায়ে বাধঁ নির্মান ও সংস্কার করা হলেও এ সুফল পায়নি স্থানীয় জনগন।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, ফুলগাজী উপজেলার বন্যার পানিতে প্লাবিত গ্রামগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করায় বিভিন্ন কাঁচা-পাকা সড়কে ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান হতে দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির ক্ষতচিহ্ন বেরিয়ে আসছে। রাস্তাঘাটে ভাঙনের স্থান দিয়ে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো তৈরি করে স্থানীয় লোকজনকে পারাপার হতে দেখা যায়। পরশুরাম উপজেলায়ও বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে হাটু পরিমাণ পানি থাকার কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকে। সড়ক থেকে পানি সরে যাওয়ায় আজ থেকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
মুহুরী নদীর পাড়ের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত জহিরুল হক রাজুু বলেন, ১৫ বছর আগে নদীর কূলে ঘর নির্মাণ করে কোনো রকমে বসবাস করছি। প্রতিবছরই বর্ষাকালে নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। আমাদের বসতঘর হারিয়েছি অনেকবার। বন্যা চলে গেলে পুনরায় আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে লোন নিয়ে ঘর মেরামত করি। কিন্তু ঘর নির্মাণের কয়েকমাস না যেতে আবার বন্যার কবলে পড়তে হয়। এভাবে জীবন চলে যাচ্ছে আমাদের। আমরা সরকারকে বলতে চাই, আমরা ত্রাণ চাই না, কোনো সহযোগিতা চাই না, আমরা নদীর বাঁধের স্থায়ী সমাধান চাই।
ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলগাজী উপজেলার ১ হাজার ১৪৫টি পরিবারে ১৪ হাজার ৫০০ বাসিন্দা রয়েছে। বন্যায় ১ হাজার ১৪৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর রোপা আমন, ১৫ হেক্টর সবজি, সাড়ে ৪৪ হেক্টর আয়তনের ৩৫০টি পুকুরের ২৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে।
পরশুরাম উপজেলার ৫৫০টি পরিবারের ২৬ হাজার বাসিন্দা রয়েছে। বন্যায় ৫৫০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬৫ হেক্টর রোপা আমন, ৫ হেক্টর সবজি, ৩০টি পুুকুরের প্রায় ২০ টন মাছ ও সাড়ে ৪ টন পোনা ভেসে গেছে।
বন্যায় দুর্গতদের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫ লাখ টাকা, ১ হাজার ৬৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বাঁধ সংস্কারে প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও বাঁধের সাতটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। পরের বছর ২০১৯ সালের বন্যায় ২২ জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। সে সময় বাঁধ সংস্কারে প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসে বাঁধের ১৫টি স্থান ভেঙে যায়। এতে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধের ৭০০ মিটার মেরামত করা হয়। ২০২১ সালের বাঁধের নয়টি স্থানে ভাঙন মেরামতের জন্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের ছয় স্থানে ভাঙা বাঁধ মেরামতের জন্য ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা গেছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রাফিউস সাজ্জাদ বলেন, নদীর নাব্যতা ও সরু হয়ে যাওয়ায় নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ১২২ কিলোমিটার নদী খননসহ দুই পাশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৭৩১ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”
- » ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন