বিশেষ প্রতিনিধি,
ফেনীর দুই বীর সন্তানকে স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বরাবর চিঠি দিয়েছেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সরকারী প্রতিষ্ঠান কমিটির সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। এই দুই প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন প্রয়াত খাজা আহামেদ ও আমিনুল করিম মজুমদার (খোকা মিয়া)। আজ বৃহস্পতিবার তিনি এই আবেদন করেন।
চিঠিতে আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা পদক বা স্বাধীনতা পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হিসেবে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ এই পদক প্রদান করা হয়ে আসছে।
খাজা আহামেদকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, খাজা আহামেদ ফেনী জেলার কৃতি সন্তান। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তিনি ১৯২০ সালে ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ঘোষিত ভারতের স্বাধীনতা আন্দলোনে যোগদান করেন। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করে ফেনীর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলোন, ভারতীয় মুসলমানদের স্বাধিকার আন্দলোন, পাকিস্তান আন্দলোন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দলোন, ১৯৭১ সালরে মুক্তিযুদ্ধসহ সকল আন্দলোনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তার সম্পাদনায় ফেনী থেকে সাপ্তাহিক সংগ্রাম নামে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, খাজা আহামেদ পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পাকিস্তান গণতন্ত্রী দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৬৪-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ তার নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা ফেনীতে অবস্থানরত ১৪০০ পাঞ্জাব রেজিমেন্টর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধ ফেনীতে শুরু হয়। ওই তারিখেই তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সচন্দ্রি লাল সিংয়ের সঙ্গে মুক্তিকামী বাঙালিদের পক্ষে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ফেনী এলাকা সর্বপ্রথম ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ মুক্ত হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আমিনুল করিম মজুমদারের বিষয়ে আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী চিঠিতে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ ও দেশের জনতার জন্য গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আমিনুল করিম মজুমদারে ফলে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ ও ২নং সেক্টরের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকার জন্য পাকিস্তান বাহিনী তার বাড়িসহ সলিয়া গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। তিনি পরশুরাম থানা ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৭৩-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি পরশুরাম উপজেলা পরিষদ এর প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফেনী-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন, সেই সময় বিএনপির সন্ত্রাসী বর্বরোচিত তান্ডবে পরাজিত হন। উল্লেখ্য তৎকালীন সময় পরশুরাম এবং ফুলগাজী থানা নিয়ে পরশুরাম উপজেলা ছিলো।
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমিনুল করিম মজুমদার (খোকা মিয়া) পরশুরাম সরকারি কলেজ, পরশুরাম হাসপাতাল সহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। অবশেষে ১৯৯৪ সালে ২৬ জুন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে সলিয়া গ্রামে ছুটে আসেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”
- » ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন