মো. শফি উল্লাহ রিপন,
বিদেশ থেকে এসে এক বন্ধুকে নিয়ে পোল্ট্রি খামার করেছিলেন ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার জগৎপুরের বাসিন্দা শরিফ। বন্যায় তার চারটি পোল্ট্রি খামারে থাকা সাত হাজার মুরগির বাচ্চা ও মুরগির খাবার সবই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু সরিয়ে বাড়ির ছাদে রাখলেও সেখানে তাদের ব্যবস্থাপনা ঠিক না হওয়ায় মারা গেছে সব মুরগি।
শরিফ বলেন, কোনোদিন বন্যা হয়নি এই এলাকায়। এরকম কিছু একটা যে এসে আমাদের এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা ভাবতে পারিনি। প্রায় ১০লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার। আমরা পাইকারিভাবে পোল্ট্রির খাবার বিক্রি করতাম। যাদের কাছে বিক্রি করেছি তারাও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ফেনী সদরের খাইয়ারা এলাকার রাস্তার মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সড়ক থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে পোল্ট্রি খামার করেছিলেন মোহাম্মদ আলম। । তবে সেটি এখন পানির নিচে। খামারে ২ হাজার ৮০০ মুরগি ও মুরগির বাচ্চা ছিল। বন্যার পানিতে পাঁচ শতাধিক মুরগি ও বাচ্চা ভেসে গেছে। বাকি মুরগি ও মুরগির বাচ্চাগুলোকে আলম ও তাঁর ছেলে ধরাধরি করে মহাসড়কের বিভাজকের ওপর এনে রেখেছেন। অর্ধেক দামে কিছু মুরগি বিক্রি করেছেন। তবুও ক্ষতি গুনতে হবে দুই লাখ টাকা বলে জানান আলম।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় আয় ও পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন ফেনীর আড়াই হাজারেরও বেশি পোল্ট্রি ও ডেইরী শিল্পের উদ্যোক্তারা। ক্ষতি সামাল দিতে সরকারি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক প্রনোদনার আশ্বাস সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের।
ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের আবদুল কুদ্দুস। সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নে। ধার দেনা, ব্যাংক ঋণ ও নিজের সঞ্চয় করা ৬০লাখ দিয়ে শুরু করেন পোল্ট্রি ব্যবসা। দুই বছর ভালো চলছিল আয় রোজগার। হঠাৎ গত ২৩আগষ্ট তার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্যোগ। বন্যায় কেড়ে নিলো তার খামারে ৩হাজার লেয়ারসহ বয়লার ও সোনালীর ৫হাজার মুরগি। সহায় সম্ভল সব হারিয়ে এখন সে নি:স্ব।
সাম্প্রতিক বন্যায় আক্রান্ত ফেনীর ছয় উপজেলার দশ লক্ষ মানুষ। পানির তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বাড়িঘর, দোকানপাট, রাস্তাঘাটসহ সব কিছু। স্রোতের তোড়ে চলে গেছে দুই হাজার ৫শত মুরগির খামার। ধ্বংস হয়ে গেছে লেয়ার, বয়লার ও সোনালী মুরগীর পাশাপাশি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। সব হারিয়ে নি:স্ব অন্যান্য খামারীরা। এখন ঘুরে দাঁড়াতে আর্থিক প্রণোদার কথা বলছেন ক্ষতিগ্রস্ত খামারীরা।
জেলার ছয় উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৮ হাজার ৭৩১টি গরু, ৩৫৯টি মহিষ, ১৫ হাজার ৫৮৮টি ছাগল ও ৭৩৬টি ভেড়া মারা গেছে। এ ছাড়াও ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০টি মুরগি ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ টাকা।
সূত্র জানায়, জেলায় ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৩টি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ১ হাজার ৯৯২টি গবাদিপশুর খামারের ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা এবং ১ হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও ৩ হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে যার বাজারমূল্য ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জেলায় ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার খড়, ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পশুপাখির ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ২৮৫ একর চারণভূমি।
জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, এবারের ভয়াবহ বন্যায় পানিতে ভাসিয়ে নিলো ৬৪ হাজার ১শত ৬১টি গবাদিপশু এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩ লাখ চার হাজার ৪শত ১০টি হাঁস-মুরগির। সব মিলিয়ে ফেনীতে প্রানী সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ৩ ৯৬ কোটি ৯লক্ষ ৫৪হাজার টাকার। খামারীদের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে খাদ্যসহ সকল ধরনের সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ, পরামর্শ ও প্রশিক্ষন দেয়ার আশ্বাস প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”
- » ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন









