অজেয় বাংলা রিপোর্ট:
ফেনীর দাগনভূঁঞা পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীদের সাত তলা আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ ফেলে চলে যান ঠিকাদার। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল তার কাছে দাবি করেন মোটা অংকের চাঁদা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় একপর্যায়ে ঠিকাদারকে কাজ বন্ধে বাধ্য করা হয় বলে উঠেছে অভিযোগ।
এদিকে কাজে বাধা এবং বাধাহীনভাবে কাজের পরিবেশ তৈরিতে উদ্যোগ নিতে গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এছাড়া দাগনভূঁঞা উপজেলা প্রকৌশলীও এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দাগনভূঁঞা সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে হয়নি কোনো সুরাহা। এতে করে, ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কাজ শুরু করতে না পারায় ভবন নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
এলজিইডি দাগনভূঁঞা উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীদের আবাসিক ভবন নির্মান প্রকল্পে’র আওতায় দাগনভূঁঞা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের নার্সারি সড়কে ৫০ শতক জায়গার ওপর পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য একটি সাত তলা আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় সাত কোটি টাকা। ভবনটিতে ২৪ টি ইউনিট ও লিফটসহ রয়েছে আধুনিক সব সুযোগসুবিধা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পান চট্রগ্রামের কনসোনেন্স ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড বিল্ডার্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ১১ নভেম্বর ২০২৪ ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
এদিকে কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনসোনেন্স ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড বিল্ডার্স এলজিইডি দাগনভূঁঞা উপজেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে সাইট বুঝে নেন। এরপর শ্রমিকদের থাকার জন্য লেবার শেড নির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল কাজে বাধা দেন এবং মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায়ে ভয়ে ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখে চলে যান। কাজ বন্ধের বিষয়টি ঠিকাদার গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনসোনেন্স ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী হারুনুর রশিদ বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর আমরা উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে নির্মাণ কাজের সাইট বুঝে নিয়ে কাজ শুরুর উদ্যোগ নিই এবং সাইটে লেবার শেড নির্মাণের জন্য লোক নিয়োগ দিই। লেবার শেড নির্মাণের শেষ পর্যায়ে স্থানীয় কিছু লোক কাজে বাধা দেন এবং শেডের টিন খুলে নিয়ে যেতে বলেন। পরে আমরা কাজ বন্ধ করে সাইট থেকে লোকজন নিয়ে আসি। তিনি জানান, বিষয়টি তিনি এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কারা বাধা দিয়েছেন, কেন দিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি কারো নাম বলতে অপরাগতা জানান। তবে সঙ্গত কারণে ঘটনার বিস্তারিত তিনি তার লিখিত অভিযোগে তুলে ধরতে না পারলেও মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করিয়েছেন বলে জানান। তিনি কাজটি আদৌ করতে পারেন কীনা এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য লিফটসহ আধুনিক সুযোগসুবিধা নিয়ে সাত তলার এমন আবাসিক ভবন ফেনী পৌরসভাসহ দেশের অনেক প্রাচীন পৌরসভায়ও নেই। ২০০০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত দাগনভূঁঞা পৌরসভায় এমন একটি ভবন পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের বলে মনে করেন পৌরবাসী। অথচ চাঁদাবাজির কারণে এখন সেই ভবনের নির্মাণ নিয়েই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ ব্যাপারে দাগনভূঁঞা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির (বিআরডিবি) চেয়ারম্যান নজির আহম্মদ বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হলে পৌরসভারই ক্ষতি। কাজটি যেন হয়, এ নিয়ে তিনিও প্রচেষ্টা চালাবেন বলে জানান।
এলজিইডি দাগনভূঁঞা উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, দাগনভূঁঞা পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীদের আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজে বাধা প্রদানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। সেখানে ঠিকাদার কারো নাম উল্লেখ না করে নির্মাণ কাজে স্থানীয় কিছু লোকজনের বাধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি তিনি দাগনভূঁঞা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দাগনভূঁঞা সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জ, দাগনভূঁঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলীকে গত ২১ জানুয়ারি ২০২৫ চিঠি দিয়ে অবহিত করেছেন বলে জানান।
দাগনভূঁঞা পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের এ ঘটনায় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবেন।
দাগনভূঁঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান জানান, এ ব্যাপারে থানাকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন। খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে দাগনভূঁঞা সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জ এস এম শাহরিয়ার রহমানের মুঠোফোনে (০১৭৬৯৩৩২৪১০) কল করে তাকে পাওয়া যায়নি।
ঠিকাদারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ শুরুর বিষয়ে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানতে এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুকের মুঠোফোনে (০১৭০৮১২৩১৯৫) একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি গত শনিবার রাত ৮ টা পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”