অজেয় বাংলা রিপোর্ট:
ফেনীর দাগনভূঞায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ নিয়ে দীর্ঘ দুই যুগের অনিশ্চয়তার কালো মেঘ অবশেষে কাটতে যাচ্ছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২০ টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পে এটিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সামনের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে উপজেলার কৃষ্ণরামপুর মৌজায় ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের পাশে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্থান ও জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রবাসী আয়ে সমৃদ্ধ এবং নগরায়নে দ্রুত ধাবমান এই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। দীর্ঘদিনেও এখানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার মানুষ। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষীত এই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ডিপিপিভুক্ত হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে।এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে অগ্নিকান্ডে মানুষের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
দাগনভূঞা বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক জসিম উদ্দিন হায়দার লিটন বলেন, দীর্ঘ দুই যুগের চেষ্টায়ও দাগনভূঞায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ না হওয়া খুবই দুঃখজনক। যার খেসারত গুনতে হচ্ছে দাগনভূঞাবাসীকে। বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ফেনী থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে আসার আগেই সব পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। দাগনভূঞায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা এড়ানো যেত।
ফেনী ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মজিদ জানান, গত এক বছরে দাগনভূঞায় ১৯ টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে বেসরকারি হিসাব মতে, অগ্নিকান্ডের ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরকারি হিসাবের কয়েকগুণ বেশি।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতার নেপথ্যে :
ফেনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের তথ্যমতে, ২০০৫ সালে ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৭৮ টি উপজেলা সদর/স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন প্রকল্পে’র আওতায় দাগনভূঞায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে যায় বাস্তবায়ন কাজ। শুরুতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য ৩৩ শতক জায়গা অধিগ্রহণ চেয়ে উপজেলার উদরাজপুর, উত্তর শ্রীধরপুর ও আজিজ ফাজিলপুর- এই তিন মৌজার যে কোন একটি জায়গা বেছে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে নির্বাচিত তিনটি স্থানের কোথাও জমি পাওয়া যায়নি। বাজার দরের চেয়ে সরকারি ক্রয় মূল্য ( মৌজার মূল্যের দেড় গুণ) কম হওয়ায় জমির মালিকেরা জমি বিক্রিতে রাজি না হয়ে অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে দেন। এরপর জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে যায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণ কাজ।
জমি অধিগ্রহণের পর আসে নতুন নির্দেশনা :
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ সালে ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৫২টি স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পে’র আওতায় উপজেলার কৃষ্ণরামপুর মৌজায় ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের পাশে ৩৩ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়। এখানেও শুরুতে বাধারমুখে পড়তে হয়। দাগনভূঞা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রত্যাশী প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার কিছু জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়ে। তিনি তার জমি অধিগ্রহণ করতে দেবেন না বলে বেঁকে বসেন। পরে তাকে অনেক বুঝিয়ে অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে মামলা থেকে নিবৃত করা হয়। তাকে নিবৃত করার পর এবার বেঁকে বসেন আরেক জমির মালিক। পরে ওই মালিকের জমি বাদ দিয়ে পাশের আরেকজনের জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তখনকার দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া এ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এদিকে জায়গা অধিগ্রহণের পর সরকার থেকে আসে নতুন নির্দেশনা। শহর এলাকা ও বিভিন্ন হাটবাজারে পুকুর- জলাধার ভরাট করে নানা অবকাঠামো গড়ে উঠার কারণে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণ করতে গিয়ে পানির সংকটে পড়তে হয়। এমন বাস্তবতায় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, নতুন করে যে সব ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ হবে সেখানে আবশ্যিকভাবে পুকুর থাকতে হবে। জায়গা অধিগ্রহণের পরিমাণ ৩৩ শতক থেকে বেড়ে দাঁড়ায় এক একরে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কাজ আপাতত থমকে যায়। অপরদিকে পুকুর খনন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আরো ৬৭ শতক জায়গা অধিগ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয়। এদিকে আগের ৩৩ শতক জায়গা মৌজার মূল্যের দেড় গুণ দামে কেনা গেলেও পরবর্তীতে সরকার অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মৌজার মূল্যের তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তহবিল সংকটের কারণে বাড়তি জমির অধিগ্রহণও আটকে যায়। তবে আশার কথা হলো- সর্বশেষ ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২০টি (১২টি নতুন ও ৮টি পুন:নির্মাণ) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পে’ দাগনভূঞার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটির জন্য অধিগ্রহণকৃত আগের ৩৩ শতক জায়গার পাশে আরো ৬৭ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে। এরইমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে অধিগ্রহণকৃত জায়গার মূল্য নির্ধারণ করে ফেনী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ফেনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক(ডিএডি) আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, দাগনভূঞা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পটি ডিপিপিভুক্ত করা হয়েছে। সামনের একনকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে আশা করছি, খুব শিগগিরই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, দাগনভূঞা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এরইমধ্যে এটি ডিপিপিভুক্ত হয়েছে। কাজও দ্রুত শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”