নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জেএসডি, এনসিপিসহ গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো। ফেনীর ৩টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছুটছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। পবিত্র ঈদুল আযহাকে ঘিরে ভোটারদের মন জয় করতে নানা কর্মকান্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষিত না হলেও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। যদিও এরইমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঈদুল আযহা সেই নির্বাচনী পালে এবার দিয়েছে বাড়তি হাওয়া। এবারের ঈদে বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিল নিজ এলাকামুখী। রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা আলোচনা। দীর্ঘদিনের ভোটারবিহীন নির্বাচনের বাইরে এসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই সাধারণ মানুষের ধারণা। ফলে ফেনীতে নির্বাচনী আবহে এবার উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আযহা।
নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঈদ উদযাপনকে নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছিলেন নানামুখী প্রস্তুতি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের চাঙা করতে ছুটে যান নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষকে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ঈদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা মানুষের পাশে থাকারও চেষ্টা করেছেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে এলাকায় চালিয়েছেন প্রচার ও গণসংযোগ।
ব্যানার-পোস্টারে অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে গেছে। এতে ঈদের পাশাপাশি ভোটের আমেজও সৃষ্টি হয়েছে। এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রত্যেকেই আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের কাছে সহযোগিতা চাওয়া শুরু করেছেন। তারা মতবিনিময় সভা এবং নানা ধরণের সেমিনার, গণসংযোগ, উঠান বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এরইমধ্যে অনেকেই কৌশলে নিজের প্রার্থীতাও ঘোষণা করেছেন। এতে ঈদকেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতি জমে ওঠে। ফেনীর ৩টি সংসদীয় নির্বাচনী আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী নির্ধারণ করেননি, তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন ইসলামী দলগুলো প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন। ঘোষিত প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ পূণর্মিলনী, বৃক্ষরোপন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার বিতরণসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা না করলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদিন ভিপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবীবুল্যাহ মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর রহমান বিপ্লবসহ বেশ কয়েকজন নেতা সাধারণ মানুষের মাঝে ঈদের উপহার বিতরণ, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তাসহ সুখে দুঃখে পাশে থেকে আগামী নির্বাচনের জন্য নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করে রেখেছেন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবীবুল্যাহ মানিক বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরে নেতাকর্মীদের কাছে ঈদ মানেই ছিল বাড়তি আতঙ্ক। ঈদ মানেই ছিল হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার-হয়রানির ভয়। বহু নেতাকর্মী নিজ বাড়িতে থেকে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। অনেকের ঈদ কেটেছে জেলে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে গত রোজার ঈদ মুক্ত পরিবেশে কাটাতে পেরেছেন নেতাকর্মীরা। এবার ঈদুল আযহাও মুক্ত পরিবেশে উদযাপন করতে পেরেছেন। বিএনপির দাবী অনুযায়ী ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে নির্বাচনের আগে আর ঈদ আসবে না। ফলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে ছিল এবারের ঈদ একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিগত সরকারের আমলে নির্যাতিত ও গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীর পরিবারের পাশে সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এরইমধ্যে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ফেনীর ৩টি আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করেছেন। ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, ডা: ফখরুদ্দিন মানিক ও অ্যাডভোকেট এস.এম কামাল উদ্দিন ঈদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের নেতাকর্মীর পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এলাকায় গিয়েছিলেন। লম্বা ছুটি কাজে লাগিয়ে, কর্মী-সমর্থকদের আরও চাঙা করেছে দলটি।
বসে নেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গঠিত নতুন দল এনসিপির নেতারাও। দলটির অধিকাংশ নেতা এবার নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করেছেন। এছাড়া ফেনী সদর আসনে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান মনজু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া, মাওলানা এনামুল হক মুছাসহ অন্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ফেনীতে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ কাটিয়েছেন। গণ অধিকার পরিষদ ও এনসিপির নেতারা নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগও করেন।
জানা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের যারা ঈদের ছুটি নিজ এলাকায় কাটিয়েছেন, তারা ঈদ উৎসবে যোগদানের পাশাপাশি গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে, এসএমএস পাঠিয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যানার- পোস্টারের মাধ্যমে গণসংযোগ করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থনকারী নেতারা। সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আমেজে চাঙা হয়ে ওঠে প্রতিটি এলাকা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”