সর্বশেষ আপডেট



» বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত

» ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ

» আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া

» গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন 

» ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

» জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন

» ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন

» ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’

» ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল

» ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”

» ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন

» বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটির পরিচিতি ও শিক্ষার মানোন্নয়নে সভা

» ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ৩৫তম ব্যাচের নবাগত শিক্ষার্থীদের বরণ

» ফেনীতে জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ

» উত্তর চন্ডিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি এম. আনোয়ারুল ইসলাম

» স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাবুর মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া ও মিলাদ

» বাম গণতান্ত্রিক জোটের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের রোডমার্চ ফেনী ছাড়লো- দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত 

» সাপ্তাহিক ফেনী সংবাদ এর প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

» ফেনীতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভে বক্তারা বলেন- মুসলিম ভূখণ্ডে হামলা করে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করা অসম্ভব

» ফেনী জেলা যুবদলের ৫১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা

সম্পাদক: শওকত মাহমুদ
মোবাইল: ০১৮১৩-২৯২৮৩৫
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মোজাম্মেল হক মিন্টু
নির্বাহী সম্পাদক: শাহজালাল ভূঁঞা
মোবাইল: ০১৭১৭-৪২২৪৩৫, ০১৮১৯-৬১৩০০৫

সহ-সম্পাদক: শেখ আশিকুন্নবী সজীব
মোবাইল: ০১৮৪০-৪৪৪৩৩৩
সম্পাদকীয় ও বার্তা কার্যালয়: শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান(৬ষ্ঠ তলা), স্টেশন রোড, ফেনী-৩৯০০।
ই-মেইল: ajeyobangla@gmail.com

Desing & Developed BY GS Technology Ltd
১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকার পক্ষে লড়ছেন জিপি, বাদী পক্ষে জিপির ছেলে !

**** তৎপর প্রভাবশালী মহল, জনমনে মূল্যবান ওই সরকারি সম্পত্তি বেদখল হওয়ার শঙ্কা ****
অজেয় বাংলা রিপোর্ট :
দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন দাগনভূঞা মৌজার ১৮২ দাগে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত ৬০ শতক ভূমি আত্মসাতে আদালতে দায়েরকৃত সেই ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় এবার উভয় পক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন বাপ-বেটা ! সরকার পক্ষে লড়ছেন সরকারি কৌসূলি (জিপি) অ্যাডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্ত। অন্যদিকে বাদী পক্ষে লড়ছেন তাঁর (জিপির) ছেলে অ্যাডভোকেট শৈবাল দত্ত। মামলায় বাপ-বেটার কৌশলী এই খেলায় জনমনে সরকারি ওই মূল্যবান সম্পত্তি বেহাত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, আদালতে বাদী পক্ষের দাখিলীয় জাল দলিলের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের কাছে বেশ কিছু অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও সরকারি কৌসূলি রহস্যজনক কারণে মামলা পরিচালনায় উদাসিনতা দেখাচ্ছেন এবং ধীরগতিতে এগোচ্ছেন। এদিকে সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সরকারি কৌসূলির এমন রহস্যজনক নিরব ভূমিকার সুযোগে বাদী পক্ষ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকে হাত করে সরকারি ওই সম্পত্তি আত্মসাতের জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। বাদী পক্ষের এমন অপতৎপরতায় সরকারি ওই সম্পত্তিটি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাজারের ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও মসজিদের মুসল্লিরা।
এদিকে ওই জায়গায় সরকারের গৃহীত দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি ‘মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স’ তৈরির প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়, বাজারের মূল কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ওই সরকারি জায়গাটি ‘মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স’ তৈরির জন্য খুব চমৎকার উপযোগী স্থান। এছাড়া ওই জায়গাটি সরকারি খাস সম্পত্তি হওয়ায় মডেল মসজিদের জন্য জায়গা অধিগ্রহণেরও প্রয়োজন পড়বে না।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে ১৯৩৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রকৃত একটি ভুয়া দলিল দেখিয়ে স্থানীয় একটি চক্র ২০১৩ সালের দিকে সরকারি ওই জায়গার মালিকানা দাবি করে হঠাৎ দৃশ্যপটে হাজির হন। এ নিয়ে তখন দৈনিক অজেয় বাংলায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সর্বস্তরে তোলপাড় শুরু হয়। উঠে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়। জনরোষের ভয়ে ওই চক্রটি পিছু হটে গিয়ে এতদিন গোপনে তৎপরতা চালালেও প্রকাশ্যে আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে ওই চক্রটি সরকারি ওই জায়গা দখলে নিতে প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে মূল্যবান ওই সরকারি সরকারি ভূমি বেদখল হওয়ার এবং সরকারের মডেল মসজিদ নির্মাণের মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মসজিদের মুসল্লি ও বাজারের ব্যবসায়ীরা।
দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু বকর ছিদ্দিক অভিযোগ করেন, যে দলিল দেখিয়ে বাদী পক্ষ সরকারি ওই ভূমি নিজেদের বলে দাবি করছেন, সেই দলিলটি এরইমধ্যে জাল, ভুয়া ও বানোয়াট বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ ফেনীর যুগ্ম জেলা জজ-১ম আদালতের বিচারিক হাকিম আদালতে বাদী পক্ষের দাখিলীয় সেই দলিলটি আসল না জাল এবং সেই সময় সাব-রেজিস্টারকে ছিলেন, দাখিলীয় দলিলের স্বাক্ষরের সাথে তাঁর স্বাক্ষরের মিল আছে কীনা মর্মে নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। এরপর নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রশিদ মন্ডল ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল ফেনীর যুগ্ম জেলা জজ-১ম আদালতে প্রেরিত এক প্রতিবেদনে জানান, নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে বিগত ১৯৩৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সাব-রেজিস্টার ছিলেন ফরিদ বখত। এবং আদালত থেকে প্রেরিত নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে বিগত ১৯৩৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রিকৃত এবং ১৯৩৭ সালের ১ মার্চ রেজিস্ট্রি কাজ সম্পূর্ণ হওয়া ৫৩৫ নং দলিলের স্বাক্ষরের সাথে নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে রক্ষিত সেই তারিখে (২৪/২/১৯৩৭) রেজিস্ট্রিকৃত ৪৫৮/০৮/১৬৯-১৭০ নং পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ দলিলের সাথে এবং ১/৩/১৯৩৭ সালে রেজিস্ট্রি কাজ সম্পূণ্র্ হওয়া ৫২৭/৮/২০৯-২১১ নং পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ দলিলে থাকা সাব-রেজিস্টারের স্বাক্ষরের সাথে সন্দেহাতীতভাবে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। কোনো মিল পাওয়া না যাওয়ায় নোয়াখালীর সদর সাব-রেজিস্টার আদালতে বাদী পক্ষের দাখিলীয় ৫৩৫ নং দলিলটি আসল নয় মর্মে প্রতিবেদন জমা দেন। এছাড়া তিনি (নোয়াখালীর সদর সাব-রেজিস্টার) আদালতে এসে সাক্ষীও প্রদান করেন।
এদিকে আদালতে বাদী পক্ষের দাখিলীয় দলিলেও রয়েছে নানা অসঙ্গতি। দলিল রেজিস্ট্রির তারিখে বাংলা সনের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে-১২ বৈশাখ ১৩৪৪। আর ইংরেজি সনের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে-২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭। অথচ বৈশাখ মাসে কখনো ফেব্রুয়ারি (!) মাস হয় না। এছাড়া ওই দলিল সূত্রে সরকারি ওই সম্পত্তির অর্ধেকের কথিত মালিকদারদের একজন হলেন নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী গ্রামের মোহাম্মদ ইয়াছিনের ছেলে আরব আলী। কথিত এই মালিকদার তাঁর জন্মের ২০ বছর আগেই জমির মালিক(!) বনে যান। চট্টগ্রাম শিপিং কর্পোরেশনের চাকরি থেকে নিষ্কৃতি সনদে তাঁর জন্মের তারিখ উল্লেখ রয়েছে ১০ মার্চ ১৯৫৭। অন্যদিকে তাঁর নামে ওই দলিল রেজিস্ট্রি হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ সালে। আরও অবাক বিষয় হলো-কথিত ওই মালিকদার তাঁর জীবদ্দশায় কখনো ওই জমির মালিকানা দাবি করেননি। ২০০৬ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর সাত বছর পর ২০১৩ সালে তাঁর দুই ছেলে ফিরোজ মিয়া প্রকাশ বাবুল ও জাফর উল্যাহ জমির মালিকানা দাবি করে দৃশ্যপটে হাজির হন। সরকারি ওই সম্পত্তির বাকি অর্ধেকের কথিত অপর মালিকদার হলেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জগতপুর গ্রামের অহিদুর রহমানের ছেলে মাহমুদুল হক। ওই দলিল রেজিস্ট্রর সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র চার বছর। তাঁর বাবা অহিদুর রহমান যদি তাঁর নামে ওই সম্পত্তি খরিদ করেই থাকেন তাহলে, তাঁর (মাহমুদুল হক) অপর দুই ভাই নবীউল হক ভূঞা ও মুজিবুল হক ভূঞার নামে কেন কিনলেন না ? কেনই বা তাঁদের বঞ্চিত (!) করলেন প্রশ্ন থেকে যায়। এছাড়া তিনি (মাহমুদুল হক) দাগনভূঞা বাজারের পুরানো একজন ব্যবসায়ী। ওই সরকারি ভূমির পাশেই তিনি বহু বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন। এরইমধ্যে ১৯৬০ সালে এস এ খতিয়ানের সময় দীন বন্ধু বণিক্য নামে জনৈক ব্যক্তির মালিকীয় ওই সম্পত্তি তাঁর অবর্তমানে তাঁর কোনো ওয়ারিশ না থাকায় ওই ভূমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়। এরপর বাংলাদেশ জরিপেও ওই সম্পত্তি সরকারি খাস ভূমি হিসেবে খতিয়ানভূক্ত হয়। তখনও কথিত ওই মালিকদার (মাহমুদুল হক) জরিপ চলাকালিন সময়ে পাশে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেও ওই জমির মালিকানা দাবি করেননি। তাঁর ভাই নবীউল হক ভূঞা দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন ২০ বছরেরও অধিক সময়কাল। তিনি নিজে ১৯৯৯ সালে ওই সরকারি সম্পত্তি মসজিদের নামে বন্দোবস্তের জন্য ভ’মি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট আবেদন করেছিলেন। এমনকি বাদী মাহমুদুল হকের বড় ছেলে দাগনভ’ঞা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নাজমুল হুদা ইস্কান্দারও দীর্ঘদিন ওই মসজিদ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনিও কখনো সরকারি ওই জায়গা তাঁর বাবার বলে দাবি করেননি। হঠাৎ ২০১৩ সালে এসে কথিত অপর মালিকদার মৃত আরব আলীর দুই ছেলে ফিরোজ মিয়া প্রকাশ বাবুল ও জাফর উল্যাহর সাথে মাহমুদুল হকও ওই সরকারি সম্পত্তির যৌথ ? মালিকানার দলিল নিয়ে হাজির হন। দলিলে উল্লেখিত কথিত মালিকদার আরব আলীর গ্রামের বাড়ি নেয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের চরপাব্র্তীতে। অপর মালিকদার মাহমুদুল হকের বাড়ি ফেনীর দাগনভ’ঞা উপজেলার জগতপুর গ্রামে।
জানা গেছে, ওই দুটো পরিবারের সাথে ওই সময় কোনো আত্মীয়তা কিংবা কোনো রকমের যোগসূত্র ছিল না। ১৯৯৭ সালে মাহমুদুল হকের ছোট ছেলে মহি উদ্দিন ভূঞা কোম্পানিগঞ্জের চরপার্বতী গ্রামে বিয়ে করার পর ওই দুটো পরিবারের সাথে আত্মীয়তা ও পরিচয়ের সূত্রপাত হয়। আরব আলী মাহমুদুল হকের ছোট ছেলে মহি উদ্দিন ভ’ঞার সম্পর্কে চাচা শ্বশুর হন। আত্মীয়তার সুবাদে তাঁর (আরব আলী) দুই ছেলে ফিরোজ মিয়া ও জাফর উল্যাহর সাথে মাহমুদুল হকের ছোট ছেলে মহি উদ্দিন ভ’ঞার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ এই যোগাযোগের সূত্র ধরেই কথিত ওই জাল দলিলের সৃষ্টি হয়। আরব আলী ২০০৬ সালের ২৩ এপ্রিলে মারার যাওয়ার আগ পয্র্ন্ত জীবদ্দশায় কখনো মূল্যবান ওই সম্পত্তি নিজের বলে দাবি করেননি। তাঁর মৃত্যুর সাত বছর পর ২০১৩ সালে তাঁর দুই ছেলে ফিরোজ মিয়া প্রকাশ বাবুল ও জাফর উল্যাহর জমির মালিকানা দাবি করে হঠাৎ দৃশ্যপটে আবিভ্র্ূত হওয়ার ঘটনায় তাই, জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
৫৩৫ নং দলিল ঘিরে যত জাল দলিল!
আরব আলী ও মাহমুদুল হক-এই দুটি পরিবারের আত্মীয়তা ও পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই জাল দলিল সৃষ্টির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে জঘণ্য জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ওই কার্যালয়ে ১৯৩৭ সালে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের সাত নং বালাম বইয়ের ৫৩ ও ৫৪ নং পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ ৫৩৫ নং দলিলের পৃষ্ঠাগুলো ছেঁড়া এবং ওই পৃষ্ঠাগুলোর কোনো হদিস নেই। আর এ সুযোগে একটি জালিয়াতচক্র ওই ৫৩৫নং দলিলকে পুঁজি করে ওই সালের সুবিধা মতো বিভিন্ন তারিখে রেজিস্ট্রি দেখিয়ে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর-বৃহত্তর নোয়াখালীর এই তিন জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি নিজেদের নামে জাল দলিল করে আত্মসাত করেছে এবং আত্মসাতের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
দাগনভূঞা মৌজার ১৮২ দাগের খাস খতিয়ানভ’ক্ত ওই ৬০ শতক ভূমিও আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ওই চক্রটি নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের ১৯৩৭ সালের ৫৩৫ নং দলিলটি ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে রেজিস্ট্রি দেখিয়ে একটি জাল দলিল সৃষ্টি করে। অভিযোগ রয়েছে, আরব আলীর ছেলে ফিরোজ মিয়া প্রকাশ বাবুল প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যক্তির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিচয় দিয়ে নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়সহ বৃহত্তর নোয়াখালীর বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি ও ভূমি অফিসে যাতায়াত করে থাকেন। যাতায়াতের সুবাদে এসব অফিসের কিছু অসাধু লোক ও দালালের সাথে তার গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে। নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের ১৯৩৭ সালের ৫৩৫ নং দলিলটিকে পুঁজি করে দাগনভূঞা মৌজার ১৮২ দাগের খাস খতিয়ানভুক্ত ওই ৬০ শতক সরকারি ভূমিও আত্মসাতের হীনস্বার্থে বাবুলের যোগসাজশে ওই জাল দলিল সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করেন দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু বকর ছিদ্দিক। বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও মসজিদের মুসল্লি ক্ষোভ করে বলেন, ফিরোজ মিয়া প্রকাশ বাবুল হলেন জাল ও ভুয়া দলিলচক্রের অন্যতম হোতা। সক্রিয় এই জালিয়াতচক্রের কাছে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকীয় কোনো সম্পত্তিই নিরাপদ নয়। এই জালিয়াতচক্রকে পাকড়াও করা না গেলে জাল দলিল তৈরির পথ বন্ধ হবে না। তারা জাল দলিলের অন্যতম হোতা ফিরোজ মিয়া প্রকাশ বাবুলকে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট জোর দাবি জানান।
দাগনভূঞা মৌজার ওই সরকারি খাস ভূমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে তৈরি ওই জাল দলিলের মতো একই দলিল নং, সমপরিমাণ ভূমি এবং একই সন ও তারিখে নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে রেজিস্ট্রি করা আরেকটি জাল দলিলের খোঁজ পাওয়া গেছে লক্ষ্মীপুর জেলায়। এ নিয়ে ওই জালিয়াতচক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা (মামলা নং-সি আর-১৯৩/১০) বিচারাধীন আছে। ওই মামলার বাদী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামের রাজা মিয়ার ছেলে হারুনুর রশিদের এজহার সূত্রে জানা যায়, বাদী হারুনুর রশিদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশ থাকার সুযোগে একই বাড়ির তাজুল ইসলাম, নুর নবী, মো. হানিফ মিয়া, হাফিজ উল্যাহ ও আবদুল মান্নান উপজেলার ইউসুফপুর ও বল্লভপুর মৌজায় বিভিন্ন দাগে তাদের (বাদী ও তার পরিবার) মালিকীয় ৬০ শতক জমি পাশবর্তী হাজির পাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলীকে গ্রহীতা এবং ইউসুফ আলীর ছেলে নুরুল হক ও ইদ্রিছ মিয়ার স্ত্রী জামিলা ভানুকে দাতা দেখিয়ে নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের ১৯৩৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রিকৃত ৫৩৫নং জাল দলিল সৃষ্টি করে আত্মসাতের পাঁয়তারা করেন। বাদী পক্ষ বিষয়টি প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানান। এরপর স্থানীয় ইউনিয়ন বোর্ড অফিসে এ নিয়ে কয়েকদফা শালিস বসে। শালিসে ওই জালিয়াতচক্রের সদস্যরা দোষী প্রমাণিত হন। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শে বাদী ওই জালিয়াতচক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে আদালত ওই জাল দলিলের বিষয়ে নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন-১৯৩৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৫৩৫ নং দলিলটি নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে সম্পাদিত হয়নি এবং দলিলটি বানোয়াট। উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল আদালত অভিযোগ গঠন করে।
এদিকে একই দলিল নং এবং একই সন ও তারিখে নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে রেজিস্ট্রি করা আরেকটি জাল দলিলের খোঁজ পাওয়া গেছে ফেনীতেও। এ নিয়ে ফেনী সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা (০৯/১৪) বিচারাধীন রয়েছে।
নোয়াখালী সদর জয়েন্ট সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের ১৯৩৭ সালের ৫৩৫ নং দলিলটিকে ঘিরে বৃহত্তর নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে জাল দলিল সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সদ্য বিদায়ী সাব-রেজিস্টার আবদুর রশিদ মন্ডল ৫৩৫ নং দলিলটিকে ঘিরে বৃহত্তর নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে জাল দলিল সৃষ্টির সত্যতা নিশ্চিত করে মুঠোফোনে জানান, দাগনভ’ঞা মৌজার ১৮২ দাগের খাস খতিয়ানভুক্ত ৬০ শতক ভ’মি আত্মসাতে ওই ৫৩৫ নং দলিল দেখিয়ে ফেনীর যুগ্ম জেলা জজ-১ম আদালতে দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে আদালত নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। তদন্তে ৫৩৫ নং দলিলটি জাল, ভুয়া ও বানোয়াট প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া তিনি নিজে এসে এ ব্যাপারে আদালতে সাক্ষী প্রদান করেছেন বলে জানান।
দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল হক অভিযোগ করেন, দাগনভূঞা মৌজার ১৮২ দাগের খাস খতিয়ানভূক্ত ওই ৬০ শতক ভূমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মাহমুদুল হক এবং মৃত আরব আলীর দুই ছেলে ফিরোজ মিয়া প্রকাশ বাবুল ও জাফর উল্যাহ বাদী হয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) বিবাদী করে ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দাগনভূঞা সহকারী জজ আদালতে প্রথমে স্বত্ব ঘোষণার মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আদালতে বাদীগণের জমা দেওয়া কাগজপত্রের সঙ্গে কথিত মালিকদার আরব আলীর চট্রগ্রাম শিপিং কর্পোরেশনের চাকরি থেকে নিষ্কৃতি সনদও জমা প্রদান করা হয়। ওই নিষ্কৃতি সনদে আরব আলীর জন্মের তারিখ উল্লেখ রয়েছে ১০ মার্চ ১৯৫৭। অথচ আদালতে তাঁর মালিকানার পক্ষে যে দলিল জমা দেওয়া হয় সেই দলিল রেজিস্ট্রি হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ সালে। কথিত এই মালিকদার তাঁর জন্মের ২০ বছর আগেই জমির মালিক(!) বনে যান। এ রকম জালিয়াতি ও নানা অসঙ্গতির কারণে বাদী পক্ষ কৌশলে স্বত্ব ঘোষণার মামলা প্রত্যাহার করে ২০১৩ সালের ২০ জুন ফেনীর যুগ্ম জেলা জজ-১ম আদালতে বন্টন মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফেনী জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), দাগনভূঞার সহকারী কমিশনার(ভূমি), দাগনভূঞা পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়রসহ সাত জনকে বিবাদী করা হয়।
জাল দলিল তৈরির বিষয়ে মামলার ২নং বাদী ফিরোজ মিয়া প্রকাশ বাবুলের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন তাদের দলিল জাল নয় এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। মামলার ১নং বাদী মাহমুমুদুল হকের ছোট ছেলে আমেরিকা প্রবাসী মহি উদ্দিন ভূঞাও মুঠোফোনে দাবি করেন তারা সত্যের ওপর আছেন। তাদের দলিল ভুয়া ও বানোয়াট নয়। তিনি জানান, তারা আইনী লড়াই চালিয়ে যাবেন।
দাগনভূঞা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক আহবায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর জিয়া উদ্দিন মাসুদ জানান, দাগনভূঞা বাজারের মূল কেন্দ্রস্থলে সরকারি খাস বাইন্না পুকুরের পাশে দাগনভূঞা মৌজার ১৮০ দাগের দুই শতক ভূমিতে দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রথম গোড়াপত্তন হয়। কালক্রমে বাজার সম্প্রসারণ ও বাজারের মুসল্লিদের ক্রমবর্ধমান চাপে মসজিদ ঘরটি সম্প্রসারণের প্রয়োজনে পাশের সরকারি খাস বাইন্না পুকুরটি ভরাট করা হয়। পরবর্তীতে মসজিদ কমিটির সভাপতি, সরকারি ওই ভূমির কথিত মালিকদার মাহমুদুল হকের ভাই নবীউল হক ভূঞা ওই দুই দাগের ৬২ শতক ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য ১৯৯৯ সালের ২৭ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে ২০০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের অনুকূলে ২০ শতক এবং দাগনভূঞা পৌরসভার অনুকূলে ৪০ শতক ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালে উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) রিট পিটিশন মামলা (৬৮৭৮/২০০৬) দায়ের করেন। পরে দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান মসজিদের মুসল্লিদের ক্রমবর্ধমান চাপ, ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পৌরসভার অনুকূলে বন্দোবস্ত পাওয়া ৪০ শতক ভ’মি শর্তহীনভাবে মসজিদকে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত পৌর পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এরপর উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি ওই রিট মামলা নিষ্পত্তি করে রায় দেন। উচ্চ আদালতের রায়ের পর মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু বকর ছিদ্দিক ওই ৬০ শতক ভূমি পুনরায় বন্দোবস্ত চেয়ে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট ফেনী জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেন। বর্তমানে ওই ভূমিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে সরকারিভাবে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জিয়া উদ্দিন মাসুদ অভিযোগ করেন, ওই সরকারি ভূমির ওপর একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে। তারা যে কোনো মূল্যে ওই সম্পত্তি গ্রাস করার পাঁয়তারা করছে।
দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান বলেন, ভৌগলিক অবস্থান, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নগরায়নে দ্রুত বিকাশমান দাগনভূঞা পৌর শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর নামাজ আদায়ের তেমন কোনো সুব্যবস্থা নেই। দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় মসজিদটি বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এখানে মুসল্লিদের চাপ বেশি। তিনি জানান, মুসল্লিদের চাপ, ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখিয়ে একটি নান্দনিক ও অত্যাধুনিক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের লক্ষ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের অনুকূলে বন্দোবস্ত পাওয়া ৪০ শতক ভূমি শর্তহীনভাবে মসজিদকে প্রদান করেন। মসজিদ ছাড়া সরকারি ওই জায়গা আত্মসাতের যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পৌরবাসীকে নিয়ে রুখে দাঁড়াবেন বলে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
‘জাল দলিলের বিরুদ্ধে আছে অকাট্য প্রমাণ,তবু জিপি নির্বিকার!’
দাগনভূঞা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু বকর ছিদ্দিক অভিযোগ করেন, যে দলিল দেখিয়ে বাদী পক্ষ সরকারি ওই ভূমি নিজেদের বলে দাবি করছেন, সেই দলিলটি এরইমধ্যে জাল, ভুয়া ও বানোয়াট বলে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারি কৌসূলির (জিপি) কাছে এ বিষয়ে বেশ কিছু অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও তিনি রহস্যজনক কারণে মামলা পরিচালনায় গাফেলতি করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি কৌসূলি অ্যাডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্তের ছেলে অ্যাডভোকেট শৈবাল দত্ত মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন। যে কারণে সরকার পক্ষের (বিবাদী) কৌসূলি তাঁর ছেলের সঙ্গে আঁতাত করে মামলা পরিচালনায় ঢিলে করছেন। এতে করে সরকারের মূল্যবান ওই সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। বিষয়টি তিনি দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ফেনী জেলা প্রশাসককেও অবহিত করেছেন বলে জানান। এছাড়া গত ১৭ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও এ নিয়ে জোর আলোচনা হয়।
মামলা পরিচালনায় গাফেলতি ও বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিজের ছেলের লড়ার প্রসঙ্গে ফেনী জজ কোর্টের সরকারি কৌসূলি (জিপি) অ্যাডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্তের নিকট মুঠোফোেনে জানতে চাইলে-তিনি মামলা পরিচালনায় গাফেলতির অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন। এছাড়া বাদী পক্ষের আইজীবী হিসেবে তাঁর ছেলে নয়, লড়ছেন সাবেক জিপি অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান। তবে মাঝে মধ্যে তাঁর ছেলে অ্যাডভোকেট শৈবাল দত্ত সাবেক জিপি অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমানের সহযোগী হিসেবে বাদী পক্ষের হয়ে আদালতে দাঁড়ান বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে সরকারি কৌসূলি (জিপি) অ্যাডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্তের ছেলে অ্যাডভোকেট শৈবাল দত্তের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাদী পক্ষের প্রধান আইনজীবী হলেন সাবেক জিপি অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান। তিনি কখনো কখনো সিনিয়রের (জেষ্ঠ্য আইনজীবী) সহায়ক হিসেবে বাদী পক্ষে আদালতে উপস্থিত থাকেন, এতে দোষের কিছু নেই।
মসজিদ কমিটির অভিযোগ, জিপির ছেলে অ্যাডভোকেট শৈবাল দত্ত মামলায় সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার কথা অস্বীকার করলেও বাস্তবে বাদী পক্ষের হয়ে মামলায় তাঁর (জিপির ছেলে) তৎপরতাই বেশি দেখা যায়। গত ঈদ-উল আযহায় ঈদের নামাজ আদায় উপলক্ষে মসজিদের সামনের মাঠে প্যান্ডেল করতে গেলে বাদী পক্ষ থেকে দাগনভূঞা থানায় অভিযোগ করা হয়। পরে থানার ওসি উভয়পক্ষকে ডাকলে বাদী পক্ষে কাগজপত্র নিয়ে অ্যাডভোকেট শৈবাল দত্তকেই থানায় আসতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে দাগনভূঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি উভয়পক্ষের কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করে দেখেছেন। নানা অসঙ্গতি ও দুর্বল কাগজপত্রের কারণে বাদী পক্ষের দলিল আদালতে টিকবে না বলে তিনি মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী জজকোর্টের জৈষ্ঠ্য এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করে বলেন, আদালতে পক্ষে-বিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে বাপ-ছেলের লড়ার ব্যাপারে আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই। তবে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থেকে যদি বাপ-ছেলের মধ্যে যোগসাজশ থাকে সেটি অন্যায় ও অনৈতিক।
সরকারি ওই ভূমি নিয়ে আদালতে মামলা ও মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞার জানান, যে দলিল দেখিয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে সেটি জাল ও ভুয়া। ওই দলিল আদালতে টিকবে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, ওই জায়গায় সরকারের গৃহীত দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি ‘মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স’ তৈরির প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাজারের মূল কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ওই সরকারি জায়গাটি ‘মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স’ তৈরির জন্য খুব চমৎকার উপযোগী স্থান। এছাড়া ওই জায়গাটি সরকারি খাস সম্পত্তি হওয়ায় মডেল মসজিদের জন্য জায়গা অধিগ্রহণেরও প্রয়োজন পড়বে না।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সরকারি ওই মূল্যবান সম্পত্তি রক্ষায় আদালতে সরকারি কৌসূলিকে (জিপি) আরো জোরালো ভূমিকা রাখার ব্যাপারে তাগাদা দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই জায়গায় সরকারি উদ্যোগে মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেও সংশ্লিষ্টদের জোর তাগিদ দেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



সম্পাদক: শওকত মাহমুদ
মোবাইল: ০১৮১৩-২৯২৮৩৫
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মোজাম্মেল হক মিন্টু
নির্বাহী সম্পাদক: শাহজালাল ভূঁঞা
মোবাইল: ০১৭১৭-৪২২৪৩৫, ০১৮১৯-৬১৩০০৫

সহ-সম্পাদক: শেখ আশিকুন্নবী সজীব
মোবাইল: ০১৮৪০-৪৪৪৩৩৩
সম্পাদকীয় ও বার্তা কার্যালয়: শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান(৬ষ্ঠ তলা), স্টেশন রোড, ফেনী-৩৯০০।
ই-মেইল: ajeyobangla@gmail.com

Design & Developed BY GS Technology Ltd

error: Content is protected !!