সুরঞ্জিত নাগ :
৫২’র ভাষা আন্দোলন। ভাষার প্রশ্নে আপসহীন বীর বাঙ্গালিরা জীবন দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন ফেনীর আবদুস সালামসহ অনেকে। ভাষা শহীদদের স্মরণে ষাটের দশকের শুরুতে ফেনী সরকারী কলেজের মূল ভবনের (লাল বিল্ডিং) দক্ষিণ পাশে পুকুরের পাড় ঘেঁষে ইট-বালু দিয়ে পাঁচ ফুট উঁচু প্রথম শহীদ বেদী নির্মাণ করা হয়। ওই শহীদ বেদীতে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পুষ্পমাল্য অর্পণ করতো।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ১৯৫২ সালে ফেনীতে ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪-৫৫ সালে তিনি ফেনী ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। ফেনীতে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন খাজা আহমদ, এবিএম মুসা, কোব্বাদ আহমেদ, শান্তি সুর, সিদ্দিক উল্লাহ, খলিল উল্লাহ, জিয়াউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ ছাত্রনেতারা।
পরবর্তীতে ২০১২ সালে নিজাম উদ্দিন হাজারী ফেনী পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ওই স্থানে বড় পরিসরে একটি নান্দনিক শহীদ মিনার নির্মাণ করেন।
ফেনী সরকারী কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তানভীর হোসেন ও শাকিলা আক্তার গর্ব প্রকাশ করে বলেন, জেলার প্রথম শহীদ মিনার ফেনী সরকারী কলেজে স্থাপিত হওয়ার বিষয়টি সত্যিই আনন্দের। যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সাধারণ ছাত্ররা। এ সংবাদটি জেনে বর্তমান ছাত্ররা আরো অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত হবে।
ফেনী সরকারী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র প্রথম আলো নিজস্ব প্রতিবেদক কমরেড আবু তাহের জানান, শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সাধারণ ছাত্ররা দাবি করলে অনীহা প্রকাশ করা হয়। পরে সাধারণ ছাত্ররা চাঁদা তুলে নিজ উদ্যোগে এটি নির্মাণ করে।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও ফেনী সরকারী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র প্রফেসর তায়বুল হক বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে ছোট্ট পরিসরে পাকা শহীদ মিনার ছিল। বেদী থেকে পাঁচ ফুট উঁচু তিনটি মিনার ছিল। মিনারগুলোর মাথার অংশ ছিল সামান্য বাঁকা। তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে ছাত্র মজলিশের নেতৃত্বে ফেনী সরকারী কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে এ শহীদ মিনার নির্মিত হয়।
ফেনী সরকারী কলেজের আরেক প্রাক্তন ছাত্র জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম বলেন, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফেনী কলেজের ছাত্ররা উদ্যোগ নিয়ে রাতের আঁধারে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও প্রভাতফেরি করতো ছাত্ররা।
প্রসঙ্গত; ১৯৫২ সালে যে আন্দোলন শুরু হয় তা জোরদার ছিলো বেশি। একুশে ফেব্রুয়ারি ফেনীতে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ভাষা শহীদ সালাম ছাড়াও ভাষা আন্দোলনে অবদান রেখেছিলেন ফেনীর কৃতি সন্তান একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক গাজীউল হক, সামছুদা হুদা, ভাষা সংগ্রামী বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও ড. শরীফা খাতুন।
উল্লেখ্য; ফেনীর সোনালী সন্তান ভাষা শহীদ আবদুস সালামের বাড়ি জেলার দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে। গ্রামের নাম লক্ষণপুর পরিবর্তন করে তাঁর নামে সালামনগর নামকরণ করা হয়। শহীদের স্মৃতি ধরে রাখতে তাঁর বাড়ির পাশে জেলা পরিষদের উদ্যোগে ‘শহীদ সালাম স্মৃতি জাদুঘর’ ও গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়। এরপর সরকারীভাবে ভাষা শহীদ সালাম প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”