লেখক- মোঃ বেলায়েত হোসেন
“পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝরণা বলো
ওই পাহাড়টা বোবা বলেই কিছু বলে না
তোমরা কেন বোঝো না যে
কারো বুকের দুঃখ নিয়ে কাব্য চলে না”
সুখ-দুঃখ-বেদনা শুধু প্রাণীর আছে; প্রকাশের ধরনে তা বোধগম্য। যদিও পাহাড়ের দুঃখ ঝর্ণা ঘিরে সুখস্মৃতি কাব্য অহরহ। পাহাড়েরও কি দুঃখ আছে? ভাবাবেশে এমন প্রশ্নে কিংকর্তব্যবিমূঢ় বৈকি? মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায় নন্দিত শিল্পী সুবীর নন্দী তাই খুঁজেছেন।
পাহাড়ের ঝর্ণা বিমূর্ত চিত্তাকর্ষক। অনেকে চোখ বন্ধ করে শুধু ঝর্ণার শব্দই শ্রবণ করে, হারায় নিজেকে কিংবা পায়েলের নিক্কন শব্দের সাথে মিল খোঁজার চেষ্টা করে। চোখ মেলে তাকিয়ে অবসন্ন চোখের ক্লান্তি দূর করে; কিংবা মনের শ্রান্তি দূর করে ফিরে পায় তারুণ্য। যাকে দেখে এত সানন্দ, তার অবস্থা আমাদের ভাবনাতীত। তার মুখের ভাষা প্রকাশ করার সুযোগ না থাকায় হয়তো দুঃখবিলাসী ঝর্ণায় প্রাণবন্ত যাপন।
পাহাড়ের সৃষ্টি ধারা নিয়ে ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক ধারনা যেমনই হোক না কেন, তার প্লাবন ধারা সবসময় অভিন্ন ও নান্দনিক। নিবেদিতভাবেই সমতলের ভারসাম্য হয়ে প্রকৃতিকে অপরূপ করেছে পাহাড়। অধিকাংশ নদীর উৎপত্তিস্থল পাহাড়- পর্বত। পাহাড়ের কষ্টের বিন্দু বিন্দু কণা নদী হয়ে সমুদ্রকে করেছে পূর্ণ। চক্রাকার একটি একটি প্রক্রিয়ায় কত আবেগ অনুভুতি আর দুঃখ জড়িয়েছে। সমুদ্রের জলীয় বাষ্প পাহাড়ের গায়ে জমাট হওয়ায় গ্রীষ্ম ও বসন্ত সমৃদ্ধ, অন্যথায় নদীর অস্তিত্ব বিলীন সময়সাপেক্ষ। যে নদীগুলো প্রাণ হারিয়েছে নিশ্চয়ই তাদের অস্তিত্ব পাহাড়ের ঝর্ণা নয় কিংবা যে ঝর্ণা অমিয় ধারায় কাঁদতে কাঁদতে প্রাণ হারিয়েছে তারই প্রতিকৃতি। পাহাড়ের কান্নায় নদী যৌবনা, তাতেও পাহাড়ের আক্ষেপ ক্লান্তি নেই। এ যেন অন্যের সুখে নিজের দুঃখ সঁপে বেঁচে থাকা।
“পাহাড়ের দুঃখগুলো ঝর্ণা হয়ে ঝরে
দুঃখ ভুলতে সব মানুষ সে ঝর্ণায় গা ধুয়ে
যত ব্যাথা ছিলো জমা নদী বয়ে চলে”
বোবা পাহাড়ের কান্নায় ঝর্ণার শব্দ কিংবা আর্তনাদের প্রতিধ্বনি বোঝার প্রশ্নে সৃষ্টি কূলে নিরব। মানুষ নিজের দুঃখ, বিষাদ, ক্লান্তি, অবসাদ পাহাড়ের ঝর্ণায় ধুয়ে নিজেকে সজীব করে তোলে। অদ্ভুত সব আয়োজনের বিনোদনে সবসময় সক্রিয় বোবা পাহাড়।
প্রিন্স মাহমুদের কথায় জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী জেমস মানুষের দুঃখ কষ্টের সমান্তরালে পাহাড়ের কান্নাকেও সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন এভাবে,
“তুমি জানলে না
আমার হাসির আড়ালে কত যন্ত্রণা, কত বেদনা
কত যে দুঃখ বোনা
পাহাড়ের কান্নাকে ঝর্ণা সবাই বলে
সেই ঝর্ণা ধারায় পাহাড় কষ্টের নদী বয়ে চলে”
সৃষ্টির আদি থেকেই এ কান্না চলে এসেছে, থাকবে অন্তবধি?
“তুমি অনন্যা তোমার আকাশছোঁয়া দীঘল উদার রূপে
বোবা কান্নায় দুঃখ সব থাকুক গুপ্ত হয়ে
কারণগুলো রহস্যময় কৌতুহলী অগণিত হৃদে
নিরবতায় অনেক কথা কয়ে যাও তুমি যে
পূর্ণতা তাই দুঃখ বিলাসী ভাবাবেশে
এভাবেই বেঁচে থাকবে অনন্তকাল প্রাণের সানন্দে।”
রামগড়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » ফেনীতে কাশফুল একাডেমি পরিদর্শনে গীতিকার ও কবি তারিক হোসেন
- » ফেনীতে ‘সেলিম আল দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫’ পেলেন প্রখ্যাত লেখক, চিন্তক, গণবুদ্ধিজীবী ড. সলিমুল্লাহ খান
- » ফেনীতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে পাঁচ দিনব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন
- » বইমেলায় শামীম আনসারীর ‘জেল থেকে বলছি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
- » সালাম
- » ফেনীতে সেলিম আল দীনের স্বর্ণবোয়াল নাটকের মঞ্চায়ন
- » ফেনীতে সাহিত্যের কাগজ ঝিনুকের মোড়ক উন্মোচন
- » প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের দাবি বিসিক শিল্প মালিকদের
- » বিকাশ-প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগঃ ফেনীর ১০ প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হলো ৩ হাজার ৭০টি বই
- » অমরত্ব